১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক মেরুদণ্ড গঠনে জিয়াউর রহমান একটি স্মরণীয় নাম। একজন সাহসী সেনা, রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক—তার জীবন-দর্শন আজও বাংলাদেশের “টেকনো-রাজনৈতিক” চরিত্রে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
প্রারম্ভিক জীবন ও সামরিক শিক্ষা
- জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি
জিয়াউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬-এ বগুড়ার বাগবাড়ি গ্রামে, পূর্ব ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)। তাঁর পিতা ছিলেন শিক্ষক ও রসায়নবিদ, মায়ের পরিচ্ছন্ন জীবনের আনন্দময় স্মৃতি তাঁকে আত্মসংযম শেখায়। - শিক্ষা ও সামরিক অভ্যস্ততা
কলকাতার Hare School-এ প্রাথমিক শিক্ষা, এবং পাকিস্তান গঠনের পর Karachi Academy School থেকে মাধ্যমিক, এরপর D.J. College (Karachi)-এ ভর্তি। ১৯৫৩-এ তিনি Pakistan Military Academy, Kakul-এ যোগ দেন; ১৯৫৫ সালে কমিশন লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ: ‘Z Force’ এবং পরাধীনতা ঘোষণা
- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন; চট্টগ্রামের সেক্টর-১ এর কমান্ডার হন এবং ‘Z Force’ নামে একটি নিজস্ব ব্রিগেড গঠন করেন, যা কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট এলাকাসহ মুক্তিগামী অভিযানে সাফল্য এনে দেয়।
- ২৭ মার্চ ১৯৭১-এ কেলুরঘাট রেডিও থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন—এই ঐতিহাসিক বার্তা গণজাগরণের মধ্যে একটি মাইলফলক।

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভ্যুদয়
- ১৯৭৫ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীর শান্তিচুক্তি ও রাজনীতির পুনর্গঠন উদ্যোগে প্রবল ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
- প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি BAKSAL, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে মাল্টিপার্টি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন; স্বাধীন প্রেস, বাজার ভিত্তিক অর্থনীতি ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেন।
অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি
- অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়নমূলক নীতি
জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের উদ্ভাবনী ভূমিকা বাড়ান, কৃষিতে “সবুজ বিপ্লব”-যোজনাসহ পানির সেচ ব্যবস্থা সর্বজনীন করেন—ফসল উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় এটি বিরাট অবদান রাখে।
তাঁকে credit দেওয়া হয়, যে তিনি পাট-চামড়া, নারীশিল্প উন্নয়ন ও রপ্তানি-মুখী বস্ত্রশিল্পের পূর্বাপর বীজ বপন করেন। - বিদেশনীতি ও কূটনীতি
তিনি SAARC প্রতিষ্ঠার ধারনার প্রথম সূত্রপাত করেন যা পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে বাস্তবায়িত হয়।
পশ্চিম ও চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনীতির সমন্বয়ভাবে সমীকরণ তৈরি করেন; ১৯৭৯-এ বাংলাদেশ UN Security Council-এ অস্থায়ী সদস্য হয়।
রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও হত্যাকাণ্ড
- জিয়ারের শাসনামলে অন্তত ২১টি সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান চেষ্টা প্রতিহত করা হয়, যা কঠোর পুলিশবাহিনীর হাত ধরেই শক্তভাবে দমন করা হয়।
- ৩০ মে ১৯৮১-এর ভোরে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে একটি অভ্যুত্থান চেষ্টায় তিনি নিহত হন—এতে অন্যান্য সহকর্মীরাও নিহত হন। হত্যার পর Zia Memorial Museum-এ সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করা হয়।
- তাঁর মাজার, ঢাকা শহরের Zia Uddan, একটি আর্কিটেকচারাল স্মৃতিসৌধ্য হিসেবে রয়েছে।
রাজনৈতিক উত্তরাধিকার
- BNP (Bangladesh Nationalist Party) প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৮ সালে। এই দলের নেতৃত্ব কেফ হিসেবে বর্তমানেও বহুদলীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
- তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিশীলতায় একটি বড় বিরতি তোলে; পরবর্তী যেসব আন্দোলন ও ক্ষমতার পালাবদল হয়—সেগুলো প্রায়ই তাঁর নীতি ও দর্শনের বিরোধ বা প্রতিচ্ছবিতে আবর্তিত হয়েছে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা – জিয়াউর রহমান
১. পূর্ণ নাম: জিয়াউর রহমান
২. জন্ম তারিখ: ১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬
৩. জন্মস্থান / গ্রাম: বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রাম
৪. মৃত্যু: ৩০ মে ১৯৮১, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত
৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
- Hare School, কলকাতা (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে কিছু সময়)
- Karachi Academy School (মাধ্যমিক)
- D.J. College, করাচি
- Pakistan Military Academy, Kakul (সেনা প্রশিক্ষণ)
৬. পেশা ও কর্মজীবন: সেনা কর্মকর্তা → মুক্তিযোদ্ধা → রাষ্ট্রপতি (১৯৭৭–১৯৮১)
৭. প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বকাল: ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ – ৩০ মে ১৯৮১
৮. রাজনৈতিক দল: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP) – প্রতিষ্ঠাতা
৯. পরিবার:
- স্ত্রী: বেগম খালেদা জিয়া (সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন)
- সন্তান: তারেক রহমান (BNP সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান), আরাফাত রহমান কোকো (প্রয়াত)
১০. নাতি/নাতনী:
- তারেক রহমানের কন্যা: জাহিয়া রহমান
- আরাফাত রহমান কোকোর দুই কন্যা (তাদের নাম সাধারণত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না)
১১. বর্তমান অবস্থা (ঐতিহাসিক): তিনি ১৯৮১ সালে নিহত হলেও তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল BNP এখনও সক্রিয়। তাঁর সমাধি ঢাকা শহরের শেরেবাংলা নগরের জিয়াউদ্দিনে (Zia Uddan) অবস্থিত।
জিয়াউর রহমানের উক্তি (Quotes)
জাতীয় ঐক্য ও উন্নয়ন
- “আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আমাদের লক্ষ্য এখন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।”
– স্বাধীনতার পর জাতীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন বিষয়ক তার সংকল্পকে তুলে ধরে - “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আমাদের সমন্বিত চেষ্টার উপর।”
– একতা ও সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা উক্তি - “আমরা সকলকে একত্রিত হতে হবে, একমাত্র ঐক্যেই রয়েছে শক্তি।”
– জাতীয় ঐক্যকে তার রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্র বলে উল্লেখ করা হয় - “এই দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হবে, আর সংগ্রামের মাধ্যমেই দেশকে সমৃদ্ধ করতে হবে।”
– সংগ্রাম ও সমৃদ্ধির সংযোগ স্মরণ করিয়ে দিল
জনগণ ও রাজনীতি
- “বাংলাদেশের রাজনীতি মানে জনগণের রাজনীতি, এবং জনগণের জন্যই আমরা কাজ করি।”
– তার নেতৃত্বের ভিত্তিটিই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ছিল - “সর্বদা জনগণের পক্ষে থাকতে হবে, কারণ জনগণের পক্ষে কাজ করা হলো আমাদের প্রথম কর্তব্য।”
– রাজনৈতিক দায়িত্ব ও জনগণের কল্যাণ তার মূলমন্ত্র ছিল - “প্রকৃত রাজনীতির চেতনা জনগণের জন্য কাজ করা।”
– রাজনৈতিক আদর্শের উপর তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস
স্বাধীনতা ও সংগ্রাম
- “যুদ্ধের পটভূমিতে আমাদের সবারই একমাত্র লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন করা, কোনো ব্যক্তি নয়, দেশের সম্মান ও মর্যাদা ছিল মূল লক্ষ্য।”
– মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিয়ে তার ধারালো বক্তব্য - “বাংলাদেশের জনগণ কখনো অন্যায়ের সামনে মাথা নত করবে না।”
– মানুষের সাহস ও অধিকার বিনম্রতার প্রতীক - “বাংলাদেশের জনগণ কখনো পরাজয় মেনে নেয় না।”
– দেশের অটুট সংকল্প চরিতার্থ করে
সংগ্রামের আহ্বান (ইংরেজি)
- “We shall fight to the last to free our Motherland.”
– তিনি স্বাধীনতার ঘোষণায় যেসব সংগ্রামী উজ্জীবন সৃষ্টি করেছিলেন, সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বহন করে - “I, Major Ziaur Rahman, … hereby declare that the independent People’s Republic of Bangladesh has been established. … We shall fight to the last to free our Motherland. … Joy Bangla.”
– এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ঐতিহাসিক ঘোষণা, যা দেশের স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে আছে - “We must not be beggars. Why should we beg? We have something to offer.”
– জাতি গঠনের আত্মবিশ্বাস এবং যোগ্যতার প্রতিফলন
সারসংক্ষেপ
জিয়াউর রহমানের উক্তিগুলো থেকে আমরা দেখতে পাই যে:
- জাতীয় ঐক্য ও সমন্বয় ছিল তার নেতৃত্বের মূলমন্ত্র।
- জনগণের জন্য রাজনীতি তার আদর্শ এবং সংগ্রাম ছিল তার ভাবধারা।
- স্বাধীনতা, সংগ্রাম ও বিজয়—এই থিমগুলো তার ভাষনকে অনুপ্রাণিত করেছে।
- নিজস্ব মর্যাদায় আত্মনির্ভরতা এবং বিদেশের ওপর নির্ভরতা পরিহারের ভাব he সাপোর্ট করতেন।
উপসংহার: আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি
জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে পুনর্গঠন করেন না—তিনি একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র, অর্থনীতির পুনর্জন্ম, কৃষিনির্ভর নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক কূটনীতির নতুন বাস্তবতা রচনায় অবদান রাখেন। তিনি টেকনোলজিক্যালভাবে অগ্রসর, অর্থনৈতিকভাবে উদ্ভাবনী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রাথমিক স্বাধীনতার অনুশীলনে উৎসাহী এক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন।
টেক নিউজের পাঠকদের জন্য টেক ভিউয়াল:
- কীভাবে শাসন ও অর্থনীতি ডিজিটালাইজেশন ও খোলা বাজারে পরিবর্তিত হলো, সেটি এখানে স্পষ্ট।
- SAARC-ভিত্তিক কৌশল, খাদ্য ও কৃষি শিল্পের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে যে কূটনীতি—এসব তথ্য টেক-সংবেদী দৃষ্টিতে অতি প্রাসঙ্গিক।