জিয়াউর রহমান: বাংলাদেশের সৎ সেনা-নেতা থেকে স্থিতিশীল রাষ্ট্রের স্থপতি

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

March 13, 2020

১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক মেরুদণ্ড গঠনে জিয়াউর রহমান একটি স্মরণীয় নাম। একজন সাহসী সেনা, রাষ্ট্রনায়ক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতীক—তার জীবন-দর্শন আজও বাংলাদেশের “টেকনো-রাজনৈতিক” চরিত্রে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।

প্রারম্ভিক জীবন ও সামরিক শিক্ষা

  • জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি
    জিয়াউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬-এ বগুড়ার বাগবাড়ি গ্রামে, পূর্ব ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)। তাঁর পিতা ছিলেন শিক্ষক ও রসায়নবিদ, মায়ের পরিচ্ছন্ন জীবনের আনন্দময় স্মৃতি তাঁকে আত্মসংযম শেখায়।
  • শিক্ষা ও সামরিক অভ্যস্ততা
    কলকাতার Hare School-এ প্রাথমিক শিক্ষা, এবং পাকিস্তান গঠনের পর Karachi Academy School থেকে মাধ্যমিক, এরপর D.J. College (Karachi)-এ ভর্তি। ১৯৫৩-এ তিনি Pakistan Military Academy, Kakul-এ যোগ দেন; ১৯৫৫ সালে কমিশন লাভ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ: ‘Z Force’ এবং পরাধীনতা ঘোষণা

  • ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন; চট্টগ্রামের সেক্টর-১ এর কমান্ডার হন এবং ‘Z Force’ নামে একটি নিজস্ব ব্রিগেড গঠন করেন, যা কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট এলাকাসহ মুক্তিগামী অভিযানে সাফল্য এনে দেয়।
  • ২৭ মার্চ ১৯৭১-এ কেলুরঘাট রেডিও থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন—এই ঐতিহাসিক বার্তা গণজাগরণের মধ্যে একটি মাইলফলক।
Dutch Royal Family meets Ziaur Rahman and wife 1979
Dutch Royal Family meets Ziaur Rahman and wife 1979

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অভ্যুদয়

  • ১৯৭৫ সালের আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীর শান্তিচুক্তি ও রাজনীতির পুনর্গঠন উদ্যোগে প্রবল ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
  • প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি BAKSAL, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাতিল করে মাল্টিপার্টি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন; স্বাধীন প্রেস, বাজার ভিত্তিক অর্থনীতি ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নেন।

অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি

  • অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়নমূলক নীতি
    জাতীয় অর্থনীতিতে বেসরকারি খাতের উদ্ভাবনী ভূমিকা বাড়ান, কৃষিতে “সবুজ বিপ্লব”-যোজনাসহ পানির সেচ ব্যবস্থা সর্বজনীন করেন—ফসল উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় এটি বিরাট অবদান রাখে।
    তাঁকে credit দেওয়া হয়, যে তিনি পাট-চামড়া, নারীশিল্প উন্নয়ন ও রপ্তানি-মুখী বস্ত্রশিল্পের পূর্বাপর বীজ বপন করেন।
  • বিদেশনীতি ও কূটনীতি
    তিনি SAARC প্রতিষ্ঠার ধারনার প্রথম সূত্রপাত করেন যা পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে বাস্তবায়িত হয়।
    পশ্চিম ও চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনীতির সমন্বয়ভাবে সমীকরণ তৈরি করেন; ১৯৭৯-এ বাংলাদেশ UN Security Council-এ অস্থায়ী সদস্য হয়।

রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও হত্যাকাণ্ড

  • জিয়ারের শাসনামলে অন্তত ২১টি সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান চেষ্টা প্রতিহত করা হয়, যা কঠোর পুলিশবাহিনীর হাত ধরেই শক্তভাবে দমন করা হয়।
  • ৩০ মে ১৯৮১-এর ভোরে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে একটি অভ্যুত্থান চেষ্টায় তিনি নিহত হন—এতে অন্যান্য সহকর্মীরাও নিহত হন। হত্যার পর Zia Memorial Museum-এ সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করা হয়।
  • তাঁর মাজার, ঢাকা শহরের Zia Uddan, একটি আর্কিটেকচারাল স্মৃতিসৌধ্য হিসেবে রয়েছে।

রাজনৈতিক উত্তরাধিকার

  • BNP (Bangladesh Nationalist Party) প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৮ সালে। এই দলের নেতৃত্ব কেফ হিসেবে বর্তমানেও বহুদলীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
  • তাঁর মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিশীলতায় একটি বড় বিরতি তোলে; পরবর্তী যেসব আন্দোলন ও ক্ষমতার পালাবদল হয়—সেগুলো প্রায়ই তাঁর নীতি ও দর্শনের বিরোধ বা প্রতিচ্ছবিতে আবর্তিত হয়েছে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা – জিয়াউর রহমান

১. পূর্ণ নাম: জিয়াউর রহমান
২. জন্ম তারিখ: ১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬
৩. জন্মস্থান / গ্রাম: বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রাম
৪. মৃত্যু: ৩০ মে ১৯৮১, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত
৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:

  • Hare School, কলকাতা (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে কিছু সময়)
  • Karachi Academy School (মাধ্যমিক)
  • D.J. College, করাচি
  • Pakistan Military Academy, Kakul (সেনা প্রশিক্ষণ)

৬. পেশা ও কর্মজীবন: সেনা কর্মকর্তা → মুক্তিযোদ্ধা → রাষ্ট্রপতি (১৯৭৭–১৯৮১)

৭. প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বকাল: ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ – ৩০ মে ১৯৮১

৮. রাজনৈতিক দল: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP) – প্রতিষ্ঠাতা

৯. পরিবার:

  • স্ত্রী: বেগম খালেদা জিয়া (সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন)
  • সন্তান: তারেক রহমান (BNP সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান), আরাফাত রহমান কোকো (প্রয়াত)

১০. নাতি/নাতনী:

  • তারেক রহমানের কন্যা: জাহিয়া রহমান
  • আরাফাত রহমান কোকোর দুই কন্যা (তাদের নাম সাধারণত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না)

১১. বর্তমান অবস্থা (ঐতিহাসিক): তিনি ১৯৮১ সালে নিহত হলেও তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল BNP এখনও সক্রিয়। তাঁর সমাধি ঢাকা শহরের শেরেবাংলা নগরের জিয়াউদ্দিনে (Zia Uddan) অবস্থিত।

জিয়াউর রহমানের উক্তি (Quotes)

জাতীয় ঐক্য ও উন্নয়ন

  • “আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি, আমাদের লক্ষ্য এখন একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।”
    – স্বাধীনতার পর জাতীয় পুনর্গঠন ও উন্নয়ন বিষয়ক তার সংকল্পকে তুলে ধরে
  • “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে আমাদের সমন্বিত চেষ্টার উপর।”
    – একতা ও সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরা উক্তি
  • “আমরা সকলকে একত্রিত হতে হবে, একমাত্র ঐক্যেই রয়েছে শক্তি।”
    – জাতীয় ঐক্যকে তার রাজনৈতিক দর্শনের কেন্দ্র বলে উল্লেখ করা হয়
  • “এই দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হবে, আর সংগ্রামের মাধ্যমেই দেশকে সমৃদ্ধ করতে হবে।”
    – সংগ্রাম ও সমৃদ্ধির সংযোগ স্মরণ করিয়ে দিল

জনগণ ও রাজনীতি

  • “বাংলাদেশের রাজনীতি মানে জনগণের রাজনীতি, এবং জনগণের জন্যই আমরা কাজ করি।”
    – তার নেতৃত্বের ভিত্তিটিই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ছিল
  • “সর্বদা জনগণের পক্ষে থাকতে হবে, কারণ জনগণের পক্ষে কাজ করা হলো আমাদের প্রথম কর্তব্য।”
    – রাজনৈতিক দায়িত্ব ও জনগণের কল্যাণ তার মূলমন্ত্র ছিল
  • “প্রকৃত রাজনীতির চেতনা জনগণের জন্য কাজ করা।”
    – রাজনৈতিক আদর্শের উপর তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস

স্বাধীনতা ও সংগ্রাম

  • “যুদ্ধের পটভূমিতে আমাদের সবারই একমাত্র লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন করা, কোনো ব্যক্তি নয়, দেশের সম্মান ও মর্যাদা ছিল মূল লক্ষ্য।”
    – মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিয়ে তার ধারালো বক্তব্য
  • “বাংলাদেশের জনগণ কখনো অন্যায়ের সামনে মাথা নত করবে না।”
    – মানুষের সাহস ও অধিকার বিনম্রতার প্রতীক
  • “বাংলাদেশের জনগণ কখনো পরাজয় মেনে নেয় না।”
    – দেশের অটুট সংকল্প চরিতার্থ করে

সংগ্রামের আহ্বান (ইংরেজি)

  • “We shall fight to the last to free our Motherland.”
    – তিনি স্বাধীনতার ঘোষণায় যেসব সংগ্রামী উজ্জীবন সৃষ্টি করেছিলেন, সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা বহন করে
  • “I, Major Ziaur Rahman, … hereby declare that the independent People’s Republic of Bangladesh has been established. … We shall fight to the last to free our Motherland. … Joy Bangla.”
    – এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ঐতিহাসিক ঘোষণা, যা দেশের স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে আছে
  • “We must not be beggars. Why should we beg? We have something to offer.”
    – জাতি গঠনের আত্মবিশ্বাস এবং যোগ্যতার প্রতিফলন

সারসংক্ষেপ

জিয়াউর রহমানের উক্তিগুলো থেকে আমরা দেখতে পাই যে:

  • জাতীয় ঐক্য ও সমন্বয় ছিল তার নেতৃত্বের মূলমন্ত্র।
  • জনগণের জন্য রাজনীতি তার আদর্শ এবং সংগ্রাম ছিল তার ভাবধারা।
  • স্বাধীনতা, সংগ্রাম ও বিজয়—এই থিমগুলো তার ভাষনকে অনুপ্রাণিত করেছে।
  • নিজস্ব মর্যাদায় আত্মনির্ভরতা এবং বিদেশের ওপর নির্ভরতা পরিহারের ভাব he সাপোর্ট করতেন।

উপসংহার: আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে পুনর্গঠন করেন না—তিনি একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র, অর্থনীতির পুনর্জন্ম, কৃষিনির্ভর নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক কূটনীতির নতুন বাস্তবতা রচনায় অবদান রাখেন। তিনি টেকনোলজিক্যালভাবে অগ্রসর, অর্থনৈতিকভাবে উদ্ভাবনী এবং রাজনৈতিকভাবে প্রাথমিক স্বাধীনতার অনুশীলনে উৎসাহী এক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন।

টেক নিউজের পাঠকদের জন্য টেক ভিউয়াল:

  • কীভাবে শাসন ও অর্থনীতি ডিজিটালাইজেশন ও খোলা বাজারে পরিবর্তিত হলো, সেটি এখানে স্পষ্ট।
  • SAARC-ভিত্তিক কৌশল, খাদ্য ও কৃষি শিল্পের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রে যে কূটনীতি—এসব তথ্য টেক-সংবেদী দৃষ্টিতে অতি প্রাসঙ্গিক।

Leave a Comment