ওয়ালাইকুমুস-সালাম: অর্থ, বানান, উত্তর, সঠিক উচ্চারণ

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

May 3, 2020

ওয়ালাইকুমুস-সালাম: অর্থ, বানান, সঠিক উচ্চারণ ও উত্তরের বিশদ আলোচনা

ইসলামিক সমাজের মধ্যে একজন মুসলিমকে সম্ভাষণ দেওয়ার সময় ‘আসসালামু আলাইকুম’ শব্দটি খুবই পরিচিত। এটির অর্থ হলো “আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।” এর উত্তরে ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ বলা হয়, যার অর্থ হলো “আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক।” এই ইসলামী সম্ভাষণটি আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী শান্তি, ভ্রাতৃত্ব এবং সহমর্মিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ এর অর্থ, সঠিক বানান, উচ্চারণ, এবং এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিশ্লেষণ করবো।

১. ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ এর অর্থ ও তাৎপর্য

‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ মূলত একটি আরবি বাক্যাংশ, যার আক্ষরিক অর্থ হলো “আপনার ওপরও শান্তি বর্ষিত হোক।” এটি ‘আসসালামু আলাইকুম’ এর উত্তরে ব্যবহৃত হয়। ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার মাধ্যমে একজন মুসলিম শান্তি, সুরক্ষা এবং আল্লাহর আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। আর তার উত্তরে ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ বলা হয় যেন একই প্রার্থনা সেই ব্যক্তির জন্যও করা হয়।

কোরান ও হাদিসে এ সম্ভাষণের গুরুত্ব:
কোরান এবং হাদিসে সালামের গুরুত্ব অনেকবার উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন:

“যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হয়, তখন তার চেয়ে উত্তমভাবে সালামের জবাব দাও অথবা সেই একই সালাম ফিরিয়ে দাও।”
—সূরা আন-নিসা (৪:৮৬)

এখানে আল্লাহর নির্দেশনা হলো সালামের উত্তরে অবশ্যই সুন্দরভাবে এবং সম্মানের সাথে সালাম দেওয়া উচিত।

২. সঠিক বানান এবং উচ্চারণ

বাংলায় ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ এর সঠিক বানান হলো ওয়ালাইকুমুস-সালাম। উচ্চারণের ক্ষেত্রে আরবির সঠিক ধ্বনি অনুসরণ করা জরুরি। এটি ধ্বনিগতভাবে এমনভাবে উচ্চারণ করা উচিত যেন শব্দের প্রকৃত অর্থ এবং মর্মার্থ প্রকাশ পায়।

ওয়ালাইকুমুস-সালাম
উচ্চারণ: Wa-Alaikum-As-Salaam
বাক্যাংশটি উচ্চারণের সময় কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হয়:

  • ‘ওয়ালাই’ অংশটি পরিষ্কারভাবে বলুন, যাতে ‘ওয়’ ও ‘আ’ এর স্পষ্টতা থাকে।
  • ‘কুমুস’ অংশে ‘ক’ এর স্বর এবং উচ্চারণ সঠিকভাবে করতে হবে।
  • ‘সালাম’ অংশের উচ্চারণ আরবির সঠিক ধ্বনির সাথে মিল রেখে করতে হবে।

৩. ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ বলার বিধান

ইসলামে সালামের উত্তরে ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ বলা বাধ্যতামূলক, যদি কেউ মুসলিম সম্ভাষণ ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে। এটি শুধু ধর্মীয় আদেশ নয়, বরং সামাজিক মেলবন্ধন এবং সৌহার্দ্য প্রকাশের অন্যতম উপায়।

হাদিসের আলোকে:
প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন:

“মুসলমানদের মধ্যে যারা প্রথমে সালাম দেয়, তারা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।”
—সহিহ মুসলিম

এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, একজন মুসলমানের জন্য প্রথমে সালাম দেওয়া এবং সালামের উত্তরে সঠিকভাবে ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ বলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

৪. মুসলিম সমাজে সম্ভাষণের প্রভাব ও গুরুত্ব

ইসলামে সালামের প্রথা একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, প্রেম এবং মমত্ববোধ জাগ্রত করে। এটি শুধু একটি শুদ্ধ সম্ভাষণ নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে সুরক্ষা এবং শান্তির বার্তা।

সালামের মাধ্যমে দুই মুসলমানের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পায় এবং অচেনা মানুষদের মাঝে সৌহার্দ্য তৈরি হয়। সমাজে যদি সবাই সালামের মাধ্যমে পরস্পরকে সম্ভাষণ জানায়, তবে সমাজে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং মানবিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।

৫. অন্যান্য ধর্মে সম্ভাষণ প্রথার তুলনা

ইসলামের মতো অনেক ধর্মেই সম্ভাষণ প্রথা আছে, যার মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তির বার্তা দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ:

  • খ্রিস্টধর্মে: সাধারণত ‘পিস বি উইথ ইউ’ বা ‘শান্তি আপনার সাথে থাকুক’ বলে সম্ভাষণ করা হয়।
  • হিন্দুধর্মে: ‘নমস্তে’ বলা হয়, যার মাধ্যমে সম্মান এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়।
  • বৌদ্ধধর্মে: ‘মেত্তা’ অর্থাৎ করুণা বা মৈত্রী প্রকাশ করা হয়।

ইসলামে ‘আসসালামু আলাইকুম’ এবং ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ এর মাধ্যমে কেবল একজনের প্রতি সম্মান নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি এবং আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়। এটি অন্য সম্ভাষণগুলোর তুলনায় অনেক বেশি গভীর এবং অর্থবহ।

৬. ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ এর বিকল্প উত্তরের ব্যবহার

যদিও ‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ সর্বাধিক ব্যবহৃত এবং মান্যতাপ্রাপ্ত উত্তর, তবুও কিছু ক্ষেত্রে আমরা আরও কিছু বিকল্প উত্তর পেতে পারি, যেমন:

  • ওয়ালাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ: যার অর্থ “আপনার ওপরও শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।”
  • ওয়ালাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু: যার অর্থ “আপনার ওপরও শান্তি, আল্লাহর রহমত এবং আশীর্বাদ বর্ষিত হোক।”

এই উত্তরগুলো সালামের অর্থ আরও ব্যাপক করে তোলে, যা আল্লাহর রহমত এবং আশীর্বাদের প্রার্থনা হিসেবে আসে।

৭. সালাম বলা এবং জবাব দেওয়ার গুরুত্ব ও উপকারিতা

সালাম দেওয়া এবং জবাব দেওয়ার মাধ্যমে অনেক উপকারিতা অর্জিত হয়, যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:

  • আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন: সালামের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়া যায়।
  • সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা: সালামের মাধ্যমে বন্ধুত্ব এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরও মজবুত হয়।
  • স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা: সালাম এবং উত্তরের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীলতা এবং মমত্ববোধ বাড়ে।
  • পাপ মোচন: সালাম দেওয়া একটি সুন্দর আমল, যার দ্বারা আল্লাহর কাছে পাপ মোচনের প্রার্থনা করা হয়।

উপসংহার

‘ওয়ালাইকুমুস-সালাম’ একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাষণ, যা ইসলামী সমাজের ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তির প্রতীক হিসেবে কাজ করে। এর অর্থ, বানান এবং উচ্চারণ সঠিকভাবে জানার মাধ্যমে আমরা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে পারি। আমাদের উচিত সর্বদা সালামের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি সৌহার্দ্য এবং আল্লাহর রহমত কামনা করা, যা কোরান এবং হাদিসে উল্লেখিত একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

সালাম দেওয়া এবং তার সঠিক জবাব দেওয়া মুসলিমদের একটি সুন্দর প্রথা, যা সমাজে শান্তি এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার অন্যতম মাধ্যম। তাই আসুন আমরা সর্বদা সালামের মাধ্যমে একে অপরকে সম্ভাষণ জানাই এবং আল্লাহর দয়া ও শান্তি লাভের চেষ্টা করি।

ধন্যবাদ টেক নিউজের সাথে থাকার জন্য।

Leave a Comment