তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির এক বিস্তৃত ও বিতর্কিত চরিত্র। তিনি কেবল ‘রাজনৈতিক বংশ’ থেকে উদ্ভূত নন, বরং তার আগ্রাসী নেতৃত্ব, প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগ এবং ক্ষমতাসীন রাজনীতির পরিবর্তন নিয়ে যে গল্প, তা আধুনিক যুগের রাজনীতিকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে।
1. পটভূমি ও প্রারম্ভিক জীবন
তারেক রহমান (Tarique Rahman), যিনি মাঝে মাঝে “তারেক জিয়া” নামেও পরিচিত, ১৯৬৫ বা ১৯৬৭ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন—তথ্যসূত্রভেদে তার জন্মবছর ভিন্নভাবে উল্লেখ দেখা যায়। তিনি বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দুই পরিবারের সন্তান: বাবা জিয়াউর রহমান (রাষ্ট্রপতি) ও মা খালেদা জিয়া (প্রধানমন্ত্রী) — উভয়েই জাতির গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ।
তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন খুব কম বয়সে, এবং ১৯৮৮ সাল থেকে বিএনপির Bogra জেলা থেকে শুরু করে পুরো দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন।
2. রাজনৈতিক উঠানামা ও দলীয় অগ্রগতি
২০০০ সালের ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে তারেককে বিএনপিতে সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়, যা তাকে দলের কার্যকর নেতৃত্বে উঠে আসতে সাহায্য করে।
২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপির শাসনামলে তার প্রভাব বাড়ে। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বড় জয়ের পর তারেক ভারতে আত্মগোপনে চলে যান, যদিও তার পরিবার রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় অবস্থা বজায় রেখেছিল।
3. আত্মনির্বাসন, অভিযোগ ও বিচারের গল্প
২০০৭ সালের রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তারেককে গ্রেপ্তার ও দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়। তারপরের বছর তার দেশ ত্যাগ তাবৎ সাংবাদিকতার দৃষ্টিভঙ্গি ও নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বিশ্বের দৃষ্টান্ত তৈরি করেন।
২০১৮ সালে নিরাপত্তা ও দাঙ্গা মামলায় তাকে ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়, এবং তার ওপর ফাঁসানো সাজা ধার্য করা হয় বলে বিএনপি দাবি করে।
মুলত: এই মামলাগুলো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে করা হয়েছে
কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাসীন দলের পতনের পর বাংলাদেশ হাইকোর্ট তার বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত ফাঁসানো সাজা বাতিল করেন—তারেকসহ ৪৯ জনকে মুক্তি প্রদান করা হয়।
একইভাবে, অন্যান্য আর্থিক ও দুর্নীতি মামলা থেকেও তীক্ষ্ণ পুনর্বিবেচনার পর তাকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়।

4. রাজনৈতিক অবস্থান ও আধিপত্য
বর্তমানে তারেক রহমান বিএনপি’র কর্মকতাদের মধ্যে ‘ডি ফ্যাক্টো’ (de facto) নেতার ভূমিকায় আছেন—যদিও তিনি দেশে না থাকলেও দলের সবচেয়ে শক্তিশালী মুখ হিসেবে গণ্য হন।
২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ পতনের পর পরিস্থিতি বিকশিত হয়। হাজারো বিএনপি কর্মী ঢাকায় সমাবেশ করে; তারেক ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে মঞ্চ তৈরি করে।
তিনি সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর নীতি ভিত্তিক কাঠামো পুনরুদ্ধার, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ৩১-পয়েন্ট নীতির স্বার্থক প্রস্তাব তৈরি করেছেন, যাতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাকস্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত হোক—বিএনপিতে তাঁর নেতৃত্বের প্রগাঢ় উল্লেখযোগ্য দিক।
5. ফেরার সফর: গণতন্ত্রের প্রত্যাশায়
তারেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশে এবং বাইরে কৌতূহল বেড়েই চলছে।
- নির্বাচনের নির্ধারণের পর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে তিনি দেশে ফিরবেন বলে সরকারের বাইরে থাকা এক উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন।
- Mirza Fakhrul ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারাক আগামী কর্মকর্তার সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও কণ্ঠস্বর পাচ্ছে—যে প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক উত্তাপে নতুন শক্তি যোগ করছে।
6. চ্যালেঞ্জ ও বিতর্ক
- তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে খাটো দিক হলো অভিযুক্ত মামলা ও গ্রেনেড হামলার নির্দেশমূলক কলম—যার অভ্যন্তরীণ এবং অব্যাহত রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে।
- বিএনপি-র নিযুক্তি সিদ্ধান্ত, স্বদেশে অনুপস্থিত থাকা, এবং ক্ষমতায় ফেরার পরিকল্পনা নিয়ে কিছু সমালোচনা উচ্চারিত হচ্ছে।
তবে, মুক্তির পর তিনি আবারো দলের নেতৃত্বে দৃঢ় অবস্থান গড়ছেন এবং সামাজিক-রাজনৈতিক পুনঃসংজ্ঞায়ন শুরু করেছেন।
7. উপসংহার ও ভবিষ্যতের পথ
তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনের এক জটিল ও অপেক্ষাকৃত উদীয়মান চরিত্র। রাজনীতিতে বংশগত ভূমিকা নিয়ে তিনি স্নায়ুতন্ত্রের মতো প্রথম থেকেই যুক্ত; কিন্তু নিজের রাজনৈতিক স্বাতন্ত্র্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তাকে আলাদা পরিচয় দিয়েছে।
বৈশিষ্ট্য:
- রাজনৈতিক রণনীতিতে ভিডিও ও ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারে পটু
- জাতীয় রাজনীতিতে গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের কথা বলায় যথেষ্ট আকর্ষণ
- দেশে উল্লাসের সাথে ফিরতে পারলে, রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে
চ্যালেঞ্জ:
- আদালতে ভয়ানক ফাঁসানো ও বিভ্রান্তিকর মামলা থেকে মুক্ত হয়ে আবার সমর্থন ফিরে কেউ
- স্বদেশে আসার নিরাপত্তা ও আইনগত বাধা
- রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও নতুন প্রচার ব্যবস্থায় আত্মপ্রকাশ করা
সাধারণ জিজ্ঞাসা – তারেক রহমান (তারেক জিয়া)
প্রশ্ন ১: তারেক রহমানের বয়স কত?
উত্তর: তারেক রহমানের জন্ম ২০ নভেম্বর ১৯৬৭ সালে, সুতরাং ২০২৫ সালে তার বয়স হবে ৫৮ বছর।
প্রশ্ন ২: তারেক রহমান কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: তিনি বাংলাদেশের কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে জন্মগ্রহণ করেন, তখন তার বাবা জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন।
প্রশ্ন ৩: তারেক রহমানের গ্রামের বাড়ি কোথায়?
উত্তর: তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ি গ্রামে।
প্রশ্ন ৪: তারেক রহমান কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন?
উত্তর:
- স্কুল: জেডিআর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বগুড়া
- কলেজ: ঢাকা কলেজ
- বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসে স্নাতক)
প্রশ্ন ৫: তারেক রহমানের রাজনৈতিক দল কোনটি?
উত্তর: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) — তিনি বর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
প্রশ্ন ৬: তারেক রহমান বর্তমানে কোথায় থাকেন?
উত্তর: তিনি দীর্ঘদিন ধরে লন্ডন, যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে অবস্থান করছেন।
প্রশ্ন ৭: তারেক রহমানের বাবা-মা কারা?
উত্তর:
- বাবা: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান
- মা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া
প্রশ্ন ৮: তারেক রহমানের স্ত্রী ও সন্তান কে?
উত্তর:
- স্ত্রী: ডা. জোবাইদা রহমান
- এক কন্যা: জায়েমা রহমান
প্রশ্ন ৯: তারেক রহমান কেন দেশে নেই?
উত্তর: ২০০৮ সালের পর মামলার চাপ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তিনি লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে যান, এবং এখনো সেখানেই অবস্থান করছেন।
প্রশ্ন ১০: তারেক রহমান কবে দেশে ফিরতে পারেন?
উত্তর: বিএনপি নেতাদের দাবি অনুযায়ী, নির্বাচনী সময়সূচি ঘোষণার পর তিনি দেশে ফিরতে পারেন।
সারসংক্ষেপ:
তারেক রহমান বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম সম্ভাবনাময় নেতা। রাজনীতিতে যুক্ত বংশগত ইতিহাস থেকে শুরু করে আত্মনির্বাসনে থাকা, গ্রেনেড মামলায় মুক্তি পাওয়া, সমাবেশ পরিচালনা, নির্বাচনের প্রস্তুতি—all মিলিয়ে তার প্রতিশ্রুতি এবং সম্ভাবনা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
ধাপে ধাপে তিনি আসন্ন নির্বাচন, রাজনৈতিক সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলার অবস্থানে আছেন।