সেন্ট মার্টিন দ্বীপ — বাংলাদেশের প্রবাল স্বর্গ

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

June 28, 2020

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ—স্থানীয়ভাবে ‘নাড়িকেল জিঞ্জিরা’ নামে পরিচিত—হল বঙ্গোপসাগরের এক বিচিত্র এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিশ্রণ। শান্ত সমুদ্র, প্রবালপ্রাচীর, এবং অসাধারণ জীববৈচিত্র্যের সমাবেশে গড়া এই দ্বীপ পর্যটক ও গবেষকদের জন্য এক অনন্য গন্তব্য।

ভৌগোলিক ও প্রশাসনিক বিবরণ

  • অবস্থান: কক্সবাজার–টেকনাফ দ্বীপপ্রান্ত থেকে প্রায় ৯ কিমি দক্ষিণে, মায়ানমার উপকূল থেকে ৮ কিমি পশ্চিমে।
  • আয়তন ও কাঠামো: মোট আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিমি, যা উচ্চ জোয়ারে কিছু অংশে ৫ বর্গকিমি পর্যন্ত কমে যায়। দ্বীপটি তিনটি অংশে বিভক্ত—উত্তরপাড়া (Jinjira), মধ্যপাড়া, এবং দক্ষিণপাড়া।
  • প্রশাসনিক বিভাগ: সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ—এতে ৯টি পাড়া/গ্রাম রয়েছে।

বাসিন্দা ও জীবনযাপন

  • আবادی: প্রায় ৩৭০০ লোকের বাস; অধিকাংশের জীবন ধরা পড়ে মাছ ধরা, নারিকেল চাষ, এবং শৈবাল (seaweed) সংগ্রহে।
  • জলবায়ু ও পরিবহন: জলবায়ু মৌসুমি, জলবদ্ধ অবস্থায় কিছু সময় দ্বীপে অবাধ যাতায়াত সম্ভব হয় না। বিদ্যুৎ সচরাচর সোলার এবং প্রজেক্টর থেকে চলে।
  • স্থাপত্য: উপকূল-ভিত্তিক কাঠামো: হসপিটাল, স্কুল, গ্রাম, এবং মৌসুমী বাজার।

জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি

  • প্রবাল ও জীবজগৎ: দ্বীপটি প্রবালপ্রাচীরে সমৃদ্ধ। ১৯৮০–২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০% প্রবাল হারিয়েছে।
  • একোবাস্তুত্ব সংরক্ষণ: ১৯৯৯ সালে এটি ‘ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ECA)’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এছাড়াও, সাম্প্রতিকভাবে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা হয়েছে।
  • চেরা দ্বীপ (Chhera Dwip): মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন এই অনাবাসিক অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসে—লো টাইডে টহল দিয়ে এখানে পৌঁছানো যায়, যেখানে প্রবাল ও বিচিত্র সৌন্দর্য দেখা যায়।

পর্যটন — আকর্ষণ ও নান্দনিকতা

  • প্রবেশপথ: সাধারণত ঢাকা থেকে কক্সবাজার বা সরাসরি টেকনাফ হয়ে ফেরি/fares কিংবা স্পিডবোটে পৌঁছানো যায়—খরচ সাধারণত সাশ্রয়ী।
  • দর্শনীয় স্থান: সেন্ট মার্টিন বিচ, প্রাকৃতিক নারিকেল বাগান, মেরিন পার্ক (প্রবাল এলাকার), কোলাহালহীন শান্ত সৈকত, চেরা দ্বীপ, উপকূলীয় পাহাড় (কালা পাহাড়) এবং সামরিক স্থাপনা সহ মিউজিয়াম।
  • কার্যক্রম: সাঁতার, স্নোরকেলিং, ডাইভিং, বাইসাইকেল ভ্রমণ, স্থানীয় সাংস্কৃতিক আবহ পাওয়া যায়।
  • থাকাকাল: আধুনিক রিসোর্ট ও গেস্টহাউস—ব্লু মারিন, প্রেসিডেন্ট প্যারাডাইস, ইত্যাদি—with limited amenitiesTripadvisorramblediary.com
  • ভ্রমণের সেরা সময়: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত—শুকনো ও স্বস্তিকরকাল, পর্যটকদের উপযোগীTake your Backpack+1

সংরক্ষণ চ্যালেঞ্জ ও পরিস্থিতির বিষয়ে সচেতনতা

  • প্রবাল বিনাশ, পর্যটন চাপ, আবর্জনা, এবং অবৈধ যাতায়াতের কারণে একো-দুর্বলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • লাইট ও শব্দে কচ্ছপ ও তাদের হাঁসফাঁস ব্যাহত হয়। মাছ ও প্রবালও ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
  • পর্যটন নিয়ন্ত্রণ: ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপটি বন্ধ থাকে; ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন ২০০০ পর্যটক সীমার মধ্যে রাখা হয়।

Frequently Asked Questions (FAQs)

প্রশ্ন ১: সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: কক্সবাজার–টেকনাফ উপদ্বীপ থেকে ৯ কিমি দক্ষিণে, মায়ানমার উপকূল থেকে ৮ কিমি পশ্চিমে।

প্রশ্ন ২: ‘নাড়িকেল জিঞ্জিরা’ নামটি কেন?
উত্তর: কারণ দ্বীপ প্রচুর নারিকেল গাছ দিয়ে পরিপূর্ণ, যা স্থানীয়দের মধ্যে ‘নাড়িকেল জিঞ্জিরা’ নামে জনপ্রিয়।

প্রশ্ন ৩: চেরা দ্বীপ কি?
উত্তর: এটি সেন্ট মার্টিনের উপকৃত একটি অংশ, উচ্চ জোয়ারে বিচ্ছিন্ন হয়, যার প্রবাল এবং শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

প্রশ্ন ৪: দ্বীপে কি কোনো সংরক্ষণ কার্যক্রম চলছে?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি ECA ও Marine Protected Area ঘোষণা করা হয়েছে, প্রবাল ও পরিবেশের সংরক্ষণে কাজ চালানো হচ্ছে।

প্রশ্ন ৫: আন্দোলন-পর্যটনজনিত চ্যালেঞ্জ কি?
উত্তর: প্রবাল হার, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভাঙা, আবর্জনা, পর্যটন চাপ—এই সব দ্বীপের পরিবেশকে প্রভাবিত করছে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গুরুত্ব

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একটি অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ, যা দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসেবে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বীপ সমুদ্রজীব বৈচিত্র্য, সামুদ্রিক প্রবাল, মাছ, শামুক–ঝিনুক এবং সামুদ্রিক কচ্ছপের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল। পাশাপাশি, এটি দেশের পর্যটন শিল্পে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। স্থানীয় অর্থনীতি মূলত পর্যটন, মাছ ধরা এবং নারকেলজাত পণ্যের উপর নির্ভরশীল। তাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ। এর আয়তন প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার হলেও জোয়ার-ভাটার কারণে আকার পরিবর্তিত হয়। শীত মৌসুমে পর্যটকের ভিড়ে দ্বীপ মুখর হয়ে ওঠে। এখানে নীল সমুদ্র, সাদা বালুর সৈকত, ঝকঝকে প্রবাল আর ঝাউবন একসাথে মিলেমিশে মনোরম পরিবেশ তৈরি করে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ কিসের জন্য বিখ্যাত

সেন্টমার্টিন দ্বীপ মূলত এর প্রবালপ্রাচীর, স্বচ্ছ নীল পানি, নারকেল গাছের সারি এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে পাওয়া যায় নানা প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক কচ্ছপ এবং রঙিন প্রবাল। দ্বীপের নারকেল পানি দেশের অন্যতম সেরা, আর তাজা সি-ফুড পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়া শীতের সময় লাল কাঁকড়া ও পরিযায়ী পাখি দ্বীপের সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় নাম কি

স্থানীয়ভাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে নারিকেল জিঞ্জিরা বলা হয়। এই নামের উৎস দ্বীপের প্রচুর নারকেল গাছ এবং গাছের সারিবদ্ধ বিন্যাস। “জিঞ্জিরা” শব্দের অর্থ হচ্ছে সারি বা শিকল, যা দ্বীপের আকার ও গাছের বিন্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কোনটি

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হলো সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। এটি বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত এবং দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রবালপ্রাচীর সমৃদ্ধ দ্বীপ। এর প্রবালপ্রাচীরগুলো সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশের দ্বীপ মানচিত্র

বাংলাদেশের দ্বীপসমূহের মধ্যে প্রধান হলো সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, মনপুরা, ভোলা এবং নিঝুম দ্বীপ। প্রতিটি দ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। তবে পর্যটন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সর্বাধিক জনপ্রিয়।

সেন্টমার্টিন মসজিদ কোথায় অবস্থিত

সেন্ট মার্টিন দ্বীপে একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ রয়েছে যা দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য প্রধান নামাজের স্থান। এই মসজিদ দ্বীপের মাঝামাঝি গ্রামে অবস্থিত এবং নৌকায় দ্বীপে পৌঁছানোর পর সহজেই সেখানে যাওয়া যায়। এটি ছোট হলেও দ্বীপের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপসংহার

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের এক অনন্য এবং প্রাকৃতিক চিরসবুজ রত্ন—প্রবালপ্রশস্ত সৈকত থেকে শুরু করে শান্তশব্দ নাইট স্কাই, সবকিছু এখানে বিদ্যমান। তবে, পর্যটক ও স্থানীয়দের সচেতন থাকা জরুরি, যাতে এই বিরল স্বর্গবর্তী ভূখণ্ড একটুও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আপনি চাইলে আমি সাম্প্রতিক ট্যুর প্যাকেজ, পরিবেশ সহায়ক ভ্রমণ পরামর্শ বা বুকিং তথ্যেও সহায়তা করতে পারি।

Leave a Comment