লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত: কক্সবাজার ভ্রমণের কেন্দ্রবিন্দু

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

September 29, 2020

কক্সবাজার ভ্রমণে গেলে সবচেয়ে বেশি মানুষের পদচারণা যেই জায়গায়, সেটি হলো লাবণী পয়েন্ট সমুদ্র সৈকত। বিস্তৃত বালুকাবেলা, গর্জনরত ঢেউ, সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আর আশেপাশের বৈচিত্র্যময় বাজার ও খাবারের দোকান—সব মিলিয়ে লাবণী পয়েন্ট কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্র।

এটি মূলত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রধান প্রবেশদ্বার, যেখানে দিন-রাত সমানভাবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। আপনি যদি প্রথমবার কক্সবাজারে যান, তাহলে লাবণী পয়েন্ট আপনার ভ্রমণ শুরু করার জন্য সেরা জায়গা।

লাবণী পয়েন্টের অবস্থান ও যাতায়াত ব্যবস্থা

লাবণী পয়েন্ট কক্সবাজার শহরের একেবারে কেন্দ্রের কাছেই অবস্থিত। বাসস্ট্যান্ড, বিমানবন্দর কিংবা হোটেল এলাকা—যেখান থেকেই আসুন না কেন, রিকশা, সিএনজি বা প্রাইভেট কারে খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়।

  • বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরত্ব: প্রায় ২ কিলোমিটার
  • কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে: প্রায় ৪ কিলোমিটার
  • কলাতলী বীচ থেকে: হাঁটাপথে ১৫ মিনিটের মতো

এছাড়া লাবণী পয়েন্টে প্রবেশ করতে কোনো আলাদা টিকিট লাগে না, তাই আপনি যেকোনো সময় এখানে যেতে পারবেন।

সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশ

লাবণী পয়েন্ট মূলত সমুদ্রের সবচেয়ে প্রাণবন্ত অংশ। এখানে ঢেউগুলো তুলনামূলক বেশি তীব্র, যা সমুদ্রপ্রেমীদের কাছে বাড়তি আকর্ষণ। ভোরবেলা যখন সূর্যের প্রথম আলো পানির উপর পড়তে থাকে, কিংবা সন্ধ্যায় লালচে রঙের সূর্য ধীরে ধীরে সমুদ্রে হারিয়ে যায়—সেই দৃশ্য মনের ভেতর এক ধরনের প্রশান্তি এনে দেয়।

সৈকতের পাশেই রয়েছে ছাতা, চেয়ার এবং শুয়ে বসে আরাম করার ব্যবস্থা। পর্যটকেরা চাইলে এসব সেবা ভাড়া নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সমুদ্রের ধারে সময় কাটাতে পারেন।

লাবণী পয়েন্টে করণীয়

লাবণী পয়েন্টে গেলে শুধু সমুদ্র দেখা নয়, আরও অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে—

  1. সমুদ্র স্নান – জোয়ারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করে পানিতে নামা যায়। এখানে লাইফগার্ড টিম সর্বদা প্রস্তুত থাকে।
  2. ঘোড়ায় চড়া – সমুদ্রের ধারে ঘোড়ায় চড়ে সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করা এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা।
  3. ফটোশুট – লাবণী পয়েন্ট কক্সবাজারের সবচেয়ে বেশি ফটোগ্রাফি হওয়া স্থান। সূর্যাস্তের সময় ছবিগুলো বিশেষভাবে মনোমুগ্ধকর হয়।
  4. স্থানীয় খাবার চেখে দেখা – আশেপাশে অসংখ্য ফাস্টফুড কর্নার, সি-ফুড রেস্টুরেন্ট এবং বার্মিজ মার্কেট রয়েছে।
  5. বিচ বাইক রাইড – অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য বিচ বাইক চালানো বেশ জনপ্রিয় একটি বিনোদন।

আশেপাশের বাজার ও কেনাকাটা

লাবণী পয়েন্টের পাশে রয়েছে বার্মিজ মার্কেট এবং স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকান। এখানে আপনি পাবেন—

  • হাতে বানানো শাঁখা ও মুক্তার গয়না
  • শামুকের তৈরি শোপিস
  • কক্সবাজারের বিখ্যাত শুকনো মাছ
  • আরাকান পোশাক ও শাড়ি
  • কাঠের কারুকাজ করা স্মারক

এই বাজারগুলো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খোলা থাকে, তাই সমুদ্র ভ্রমণের ফাঁকে সহজেই কেনাকাটা করা যায়।

খাবার ও রেস্টুরেন্ট

লাবণী পয়েন্ট এলাকায় বিভিন্ন মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এখানে আপনি পাবেন—

  • সি-ফুড আইটেম: কোরাল মাছ, লবস্টার, কাঁকড়া, চিংড়ি
  • দেশি খাবার: ভাত, মাছ, মাংস, ডাল, ভর্তা
  • ফাস্টফুড: বার্গার, ফ্রাইড চিকেন, পিজ্জা
  • মিষ্টান্ন: বার্মিজ কেক, নারিকেল পিঠা

জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে পানসি রেস্টুরেন্ট, ধানসিঁড়ি, ঝিনুক শপ ইত্যাদি রয়েছে।

লাবণী পয়েন্টের কাছাকাছি হোটেল ও রিসোর্ট

যারা লাবণী পয়েন্টে ঘন ঘন আসতে চান, তারা কাছাকাছি কোনো হোটেলে থাকলে বেশি সুবিধা পাবেন। কিছু জনপ্রিয় হোটেল হলো—

  • Hotel Sea View – সি-ভিউ রুম এবং রুফটপ রেস্টুরেন্টসহ
  • Hotel Kollol – সমুদ্রের একদম পাশে অবস্থিত
  • Ocean Paradise Hotel – বিলাসবহুল থাকার সুযোগ
  • Hotel Mishuk – বাজেট ফ্রেন্ডলি অপশন

নিরাপত্তা ও সতর্কতা

যদিও লাবণী পয়েন্ট সবসময় পর্যটকে ভরপুর থাকে, তারপরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত—

  • পানিতে নামার সময় লাইফগার্ডের নির্দেশনা মেনে চলুন
  • জোয়ারের সময় গভীর পানিতে যাওয়া এড়িয়ে চলুন
  • ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ও মূল্যবান দ্রব্য সাবধানে রাখুন
  • শিশুদের সবসময় নজরে রাখুন

প্রশ্নোত্তর (FAQ)

১. লাবণী পয়েন্ট কক্সবাজার শহর থেকে কত দূরে?

শহরের কেন্দ্র থেকে মাত্র ১-২ কিলোমিটার দূরে, রিকশা বা সিএনজিতে ৫-১০ মিনিট লাগবে।

২. এখানে কি রাতেও যাওয়া যায়?

হ্যাঁ, তবে সন্ধ্যার পর সৈকতের কিছু অংশে আলো কম থাকে, তাই সতর্ক থাকা ভালো।

৩. লাবণী পয়েন্টে সি-ভিউ হোটেল আছে কি?

হ্যাঁ, Hotel Kollol, Sea Crown, Ocean Paradise ইত্যাদি হোটেলে সি-ভিউ রুম পাওয়া যায়।

৪. সমুদ্র স্নানের জন্য কি নির্দিষ্ট এলাকা আছে?

হ্যাঁ, লাইফগার্ড চিহ্নিত নিরাপদ এলাকায় স্নানের অনুমতি দেওয়া হয়।

শেষ কথা

লাবণী পয়েন্ট শুধু কক্সবাজারের একটি সমুদ্র সৈকত নয়, বরং এটি এক প্রাণবন্ত মিলনমেলা—যেখানে ভ্রমণ, বিনোদন, কেনাকাটা আর খাবার—সব একসাথে উপভোগ করা যায়। ভোরের সূর্যোদয় থেকে রাতের ঢেউয়ের গর্জন—লাবণী পয়েন্টের প্রতিটি মুহূর্ত আপনাকে মুগ্ধ করবে। কক্সবাজারে গেলে এই জায়গাটি অবশ্যই আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখুন, আর একবার নয়, বারবার ঘুরে আসুন এই সৌন্দর্যের রাজ্যে।

-Travel Desk, Tek NEWS Bangla

Leave a Comment