কলাতলী সমুদ্র সৈকত: কক্সবাজারের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের গোপন খনি

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

August 30, 2022

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম অনন্য উপহার কক্সবাজার। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হিসেবে খ্যাত এই শহরের রয়েছে নানা সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য। তবে কক্সবাজার বলতে আমরা সাধারণত কেবল মূল সৈকতের কথাই ভাবি। অথচ এই শহরের বুকে আরও কিছু অনাবিষ্কৃত রত্ন লুকিয়ে আছে, যার একটি হলো কলাতলী সমুদ্র সৈকত বা কলাতলি বীচ

কলাতলী সৈকত কোথায় অবস্থিত?

কলাতলী সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত, মূল সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট থেকে খুব কাছেই। কক্সবাজারের কলাতলী রোড ধরে একটু সামনে এগোলেই আপনি পৌঁছে যাবেন এই তুলনামূলক কম ভিড়ের, শান্ত ও মনোরম সৈকতে। এখানকার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য হোটেল, রিসোর্ট, খাবার দোকান ও বিচ অ্যাক্টিভিটি স্পট।

কেন ঘুরে আসবেন কলাতলী সৈকতে?

১. শান্তিপূর্ণ পরিবেশ

কলাতলী সৈকত লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্টের তুলনায় অনেকটাই কম জনবহুল। তাই যারা প্রকৃতির নৈঃশব্দ্য ভালোবাসেন বা একটু নিরিবিলি সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান। ভোরের আলোয় বা সন্ধ্যার ছায়ায় কলাতলীর ঢেউ আর বাতাস আপনাকে এক অনন্য প্রশান্তি দেবে।

২. পর্যটকদের জন্য সব সুবিধা

কলাতলীর আশেপাশে রয়েছে অসংখ্য মানসম্পন্ন হোটেল ও রিসোর্ট। তাই আপনি সহজেই এই অঞ্চলে থেকে সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। “সি পার্ল,” “হোটেল দ্যা কক্স টুডে,” “সাগরিকা রিসোর্ট” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য হোটেল এখানে পাওয়া যায়।

৩. বিচ অ্যাক্টিভিটিজের অভিজ্ঞতা

কলাতলীতে রয়েছে নানা ধরনের সাগরকেন্দ্রিক কার্যক্রম—

  • জেট স্কি
  • প্যারাসেইলিং
  • স্পিড বোট
  • ঘোড়ার গাড়ি
  • স্যান্ড বাইক রাইড

এসব অ্যাক্টিভিটিজ আপনাকে দেবে এক নতুন রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

কলাতলী সৈকতের বিকেলের রঙিন আকাশ, ঢেউয়ের ছন্দ আর দূরে ভেসে থাকা জাহাজের দৃশ্য আপনার চোখে এবং ক্যামেরায় রেখে দেবে এক অমলিন স্মৃতি। ফটোগ্রাফাররা এই সৈকতের সূর্যাস্তের ছবি তুলতে বিশেষ আগ্রহী।

প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ফটোগ্রাফির স্বর্গ

স্থানীয় সংস্কৃতি ও সামুদ্রিক পণ্য

কলাতলী সৈকতের পাশে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান, যারা বিক্রি করেন সামুদ্রিক ঝিনুক, নকশা করা শাঁখা, মালা ও আরও অনেক কিছু। স্থানীয় শিশুদের হাতে তৈরি এসব সামগ্রী পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

খাবারের স্বর্গ

কলাতলী সৈকতের আশেপাশে বেশ কিছু জনপ্রিয় খাবারের দোকান ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে যেখানে আপনি খেতে পারবেন—

  • টাটকা সামুদ্রিক মাছ
  • কক্সবাজারের বিখ্যাত শুঁটকি
  • নারিকেলের দুধে রান্না করা চিংড়ি
  • ফিশ ফ্রাই ও বারবিকিউ

“পানসি,” “ঊষা,” ও “মেরিন ড্রাইভ ফুড কর্নার” এখানকার জনপ্রিয় কিছু রেস্টুরেন্ট।

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা বা দেশের অন্যান্য শহর থেকে কক্সবাজার পৌঁছে আপনি সিএনজি, টমটম বা রেন্টাল বাইক নিয়ে খুব সহজেই পৌঁছাতে পারেন কলাতলী সৈকতে। কলাতলী রোড ধরে চললেই গুগল ম্যাপের সাহায্যে আপনি পথ পেয়ে যাবেন।

কোথায় থাকবেন?

কলাতলী সৈকতের আশেপাশে অনেক হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে, যার মধ্যে কিছু হলো—

  • Hotel Sea Crown
  • Ocean Paradise Hotel & Resort
  • Long Beach Hotel
  • Windy Terrace

এই হোটেলগুলোতে সামুদ্রিক দৃশ্যসহ মানসম্মত সেবা পাওয়া যায়।

পর্যটকদের জন্য কিছু পরামর্শ

  1. সন্ধ্যার পরে সৈকতে বেশি গভীরে না যাওয়া ভালো।
  2. ঘোড়ার গাড়ি বা বাইক রাইড করার সময় দরদাম করে নিন।
  3. স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীদের থেকে পণ্য কিনে তাদের সহায়তা করুন।
  4. প্রকৃতি রক্ষায় সৈকতে প্লাস্টিক বা ময়লা না ফেলে নিজ দায়িত্বে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।

“কম পরিচিত অথচ মনকাড়া” — কলাতলীকে বিশেষভাবে আলাদা করার কারণ

১. মেরিন ড্রাইভ সংযোগ ও রোড ট্রিপ অভিজ্ঞতা

কলাতলী সৈকত থেকে সহজেই মেরিন ড্রাইভ রোডে যাওয়া যায়, যা কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। এই রোডে বাইক/গাড়িতে করে ভ্রমণ করলে একদিকে সমুদ্র, আরেকদিকে পাহাড়—অবর্ণনীয় এক অভিজ্ঞতা।

২. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লাইভ মিউজিক

সাধারণত পর্যটন মৌসুমে কলাতলী পয়েন্টের কিছু রেস্টুরেন্ট বা রিসোর্টে সরাসরি সঙ্গীতানুষ্ঠান, লোকজ নৃত্য বা বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রাম আয়োজন করা হয়।

৩. পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের বার্তা

  • প্লাস্টিক ফ্রি সৈকত গড়ার আহ্বান
  • ভ্রমণকারীদের জন্য “Leave No Trace” নীতি
  • স্থানীয় ক্লিন-আপ উদ্যোগ (যদি থাকে, তার নাম উল্লেখ করে দেওয়া যেতে পারে)

৪. লোকাল হস্তশিল্প ও স্যুভেনির মার্কেট

কলাতলী রোডের পাশে পাওয়া যায় হাতের তৈরি মালা, কাঠের খুদাই, শাঁখা-বালা, চামড়ার ব্যাগ ও জামদানির মত দেশীয় পণ্য—যা শুধু স্মারক নয়, স্থানীয় অর্থনীতিকেও সহায়তা করে।

৫. ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও ঋতুভিত্তিক অভিজ্ঞতা

  • অক্টোবর থেকে মার্চ: শীতল, শান্ত ও পরিষ্কার আবহাওয়া
  • বর্ষাকালে ঢেউ বেশি, তবে ফটোগ্রাফির জন্য নৈসর্গিক রূপ
  • ঈদ বা বড় ছুটিতে প্রচুর ভিড়—এই তথ্য আগেই জানানো

৬. শিশু ও পরিবারের জন্য উপযোগী সৈকত

কলাতলীতে অপেক্ষাকৃত কম ভিড় ও সমতল বালুর কারণে এটি শিশুদের জন্য উপযুক্ত। অনেক পরিবার এখানে বাচ্চাদের নিয়ে নির্ভরতার সঙ্গে ঘুরতে আসে।

৭. ফিল্ম ও মিডিয়া শুটিং লোকেশন

অনেক বাংলা নাটক, সিনেমা ও মিউজিক ভিডিওর শুটিং হয়েছে এই কলাতলী সৈকতের আশপাশে। পাঠকদের জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।

শেষ কথায়…

কলাতলী সমুদ্র সৈকত হলো কক্সবাজারের এক অনাবিষ্কৃত সৌন্দর্য। যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন, ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলি সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এটি এক স্বর্গীয় গন্তব্য। পরিবার, বন্ধু বা একান্ত নিজস্ব ভ্রমণ—সব ক্ষেত্রেই কলাতলী সৈকত আপনাকে উপহার দেবে এক ভিন্নতর অভিজ্ঞতা।

পরবর্তীবার কক্সবাজার গেলে শুধু লাবণী বা ইনানী নয়, সময় করে ঘুরে আসুন কলাতলী সৈকতেও। সৌন্দর্য আর প্রশান্তির সংমিশ্রণে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন, নিঃসন্দেহে।

Leave a Comment