যোহরের নামাজ কয় রাকাত

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

May 16, 2020

যোহরের নামাজের রাকাত সংখ্যা—যোহরের নামাজ মোট ১২ রাকাত, যা সুনির্দিষ্টভাবে পালন করা হয়। এ রাকাতগুলো ভাগ করা হয়েছে, যা ৪ রাকাত সুন্নত৪ রাকাত ফরজ২ রাকাত সুন্নত এবং ২ রাকাত নফল হিসেবে।

যোহরের নামাজ: গুরুত্ব, নিয়মাবলি এবং রাকাত সংখ্যা

ইসলাম ধর্মে প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। মুসলমানদের জন্য নামাজ আদায় করা ফরজ এবং এটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে অন্যতম হলো যোহরের নামাজ। যোহরের নামাজটি দিনের প্রথম দিকে আদায় করা হয় এবং এটি মহান আল্লাহর কাছ থেকে এক মহামূল্যবান সময় হিসেবে বিবেচিত।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা যোহরের নামাজের গুরুত্ব, এর রাকাত সংখ্যা, নিয়মাবলি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

যোহরের নামাজের গুরুত্ব

যোহরের নামাজ দিনের দ্বিতীয় নামাজ, যা সূর্য যখন মধ্যাকাশে আসে তখন আদায় করতে হয়। এটি মুসলমানদের জন্য বাধ্যতামূলক (ফরজ) নামাজের একটি এবং এর গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। হাদিস থেকে জানা যায় যে, যোহরের নামাজ মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সাহায্য করে এবং তাদের মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি অন্যতম মাধ্যম।

যোহরের নামাজ মূলত ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান, যা আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বরকত আনতে সাহায্য করে। ইসলামি ঐতিহ্য অনুসারে, নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রতিদিন যোহরের নামাজ নিয়মিতভাবে আদায় করতেন এবং মুসলমানদের প্রতি এ নামাজ পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

যোহরের নামাজের রাকাত সংখ্যা

যোহরের নামাজের রাকাত সংখ্যা হলো ১২ রাকাত, যা সুনির্দিষ্টভাবে পালন করা হয়। এ রাকাতগুলো ভাগ করা হয়েছে ফরজ এবং সুন্নত হিসেবে। নিচে এর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো:

  1. সুন্নতে মোয়াক্কাদা (পাকা সুন্নত) – ৪ রাকাত:
    যোহরের নামাজের প্রথমে চার রাকাত সুন্নত মোয়াক্কাদা আদায় করা হয়। এটি নবী (সা.) নিয়মিত আদায় করতেন এবং আমাদের জন্যও আদায় করা সুন্নত হিসেবে গণ্য।
  2. ফরজ – ৪ রাকাত:
    সুন্নত আদায় করার পরে যোহরের ফরজ নামাজের চার রাকাত পড়া হয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ফরজ নামাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং এটি ছেড়ে দেওয়া মস্ত বড় পাপ।
  3. সুন্নতে মোয়াক্কাদা (পাকা সুন্নত) – ২ রাকাত:
    ফরজ নামাজের পরে আরও দুই রাকাত সুন্নত মোয়াক্কাদা আদায় করা হয়। এটি সবার জন্য সুন্নত এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বিশেষ সাওয়াব অর্জন করা যায়।
  4. নফল (ইচ্ছামতো) – ২ রাকাত:
    শেষে ইচ্ছা করলে আরও দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এটি বাধ্যতামূলক নয়, তবে এর মাধ্যমে অতিরিক্ত সাওয়াব পাওয়া যায়।

মোট রাকাত: ১২ রাকাত (৪ রাকাত সুন্নত, ৪ রাকাত ফরজ, ২ রাকাত সুন্নত, ২ রাকাত নফল)।

যোহরের নামাজের সময়

যোহরের নামাজের সময় সূর্য মধ্যগগনে পৌঁছে পশ্চিম দিকে হেলে পড়া শুরু করলে শুরু হয় এবং এটি সাধারণত দুপুরের সময়ে পড়া হয়। তবে স্থানভেদে এবং বছরের বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। নামাজের সময় নির্ধারণের জন্য ইমাম এবং মসজিদগুলোতে আজানের ব্যবস্থা রয়েছে, যা নামাজের সঠিক সময় জানিয়ে দেয়।

নামাজের সময়সূচী সম্বন্ধে কয়েকটি নির্দেশিকা:
  • গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মকালে যোহরের সময় একটু দেরিতে পড়ে, সাধারণত দুপুর ১২:৩০ থেকে শুরু হয়।
  • শীতকাল: শীতকালে সূর্য দ্রুত পশ্চিম দিকে হেলে পড়ায় নামাজের সময়ও আগে শুরু হয়, যা সাধারণত দুপুর ১২:০০ থেকে হয়।

যোহরের নামাজের নিয়মাবলি

যোহরের নামাজের নিয়ম অন্যান্য নামাজের মতোই, তবে এখানে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ রয়েছে, যা সঠিকভাবে পালন করা জরুরি:

  1. নিয়ত করা:
    নামাজ শুরুর আগে নিয়ত করতে হয়। নিয়ত হলো আপনার মনে দৃঢ় সংকল্প যে, আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এই যোহরের নামাজ আদায় করছেন।
  2. তাকবির দিয়ে শুরু করা:
    নিয়তের পর ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নামাজ শুরু করতে হয়। এটি তাকবির-এ-তাহরিমা নামে পরিচিত।
  3. ফাতিহা এবং সূরা পাঠ করা:
    প্রতিটি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর কুরআনের অন্য কোনো সূরা বা আয়াত পড়তে হয়।
  4. রুকু ও সেজদা:
    প্রতিটি রাকাতে রুকু এবং সেজদা করতে হয়। রুকু করার সময় ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম’ বলা হয় এবং সেজদার সময় ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ বলা হয়।
  5. তাশাহহুদ:
    দুই রাকাতের পরে তাশাহহুদ বসে পড়তে হয়।

যোহরের নামাজের ফজিলত

যোহরের নামাজের ফজিলত অপরিসীম। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে যে, যোহরের নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে এবং তার রিজিক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়াও, এটি মানুষকে পাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং তাদের জীবনকে বরকতময় করে তোলে। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি নিয়মিত যোহরের নামাজ আদায় করে, তার জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়।”

যোহরের নামাজের গুরুত্ব বোঝানোর কিছু হাদিস

  1. নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি যোহরের নামাজ ফরজ এবং সুন্নত সহকারে নিয়মিত আদায় করে, আল্লাহ তার জীবনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করেন।” (তিরমিজি)
  2. এক হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে, “যোহরের নামাজ দিনের মাঝামাঝি সময়ের নামাজ এবং এটি সেই সময় আদায় করা হয় যখন মানুষের ওপর আল্লাহর রহমত অধিক প্রবাহিত হয়।” (বুখারি)

যোহরের নামাজের সওয়াব বৃদ্ধি করার উপায়

যোহরের নামাজের মাধ্যমে আরও বেশি সওয়াব অর্জন করার জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে:

  1. খুশু ও খুজু সহকারে নামাজ আদায় করা:
    নামাজের সময় মনোযোগ ও বিনম্রতা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। খুশু সহকারে নামাজ আদায় করলে আল্লাহর কাছে সেই নামাজ অধিকতর প্রিয় হয়।
  2. মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা:
    যোহরের নামাজ মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করলে এর সওয়াব কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়।
  3. নামাজের পরে দোয়া করা:
    যোহরের নামাজের পরে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তা সহজেই কবুল হয় এবং এর মাধ্যমে অতিরিক্ত সওয়াব পাওয়া যায়।

উপসংহার

যোহরের নামাজ প্রতিদিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদত। এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে রহমত ও বরকত লাভ করা যায়। ইসলামের প্রতিটি বিধান মুসলমানদের জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে, এবং যোহরের নামাজও তার ব্যতিক্রম নয়। নিয়মিতভাবে এবং সুন্নত অনুযায়ী যোহরের নামাজ আদায় করলে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি এবং আমাদের পার্থিব ও আখেরাতের জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিয়মিতভাবে যোহরের নামাজসহ অন্যান্য নামাজগুলো সঠিকভাবে আদায় করার তাওফিক দিন।

ধন্যবাদ টেক নিউজের সাথে থাকার জন্য।

Leave a Comment