সালামের সঠিক উত্তর কি

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

April 29, 2020

সালামের সঠিক উত্তর: ইসলামের মূল শিক্ষা এবং গুরুত্ব

ইসলামে সালাম বা অভিবাদনের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম আদান-প্রদান কেবলমাত্র একধরনের সামাজিক শিষ্টাচার নয়, এটি ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। এটি মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসার প্রসার ঘটায়। ইসলামের মৌলিক শিক্ষার অন্যতম ভিত্তি হলো সালাম, যা শান্তি, কল্যাণ এবং সমৃদ্ধির বার্তা বহন করে। এই ব্লগে আমরা সালামের সঠিক উত্তর, এর গুরুত্ব, এবং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এর ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করবো।

সালামের অর্থ এবং প্রেক্ষাপট

‘সালাম’ শব্দটি আরবি ভাষার ‘সালামাহ’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘শান্তি’, ‘নিরাপত্তা’ এবং ‘কল্যাণ’। ইসলামে সালাম আদান-প্রদান একটি পবিত্র অভ্যাস, যা মুসলিম সমাজে শান্তি ও স্নেহের বার্তা পৌঁছাতে সাহায্য করে। যখন একজন মুসলিম অন্য একজনকে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ (الَسَّلاَمُ عَلَيْكُمْ) বলেন, তখন এর অর্থ হলো “আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।”

সালামের উত্তরের গুরুত্ব

সালামের উত্তর দেওয়াকে ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর জন্য কুরআন এবং হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কুরআনের সূরা নিসা (৪:৮৬) তে আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আর তোমাদের প্রতি সালাম জানানো হলে, তোমরা তার চেয়ে উত্তমভাবে উত্তর দাও, অথবা একইভাবে তার প্রতিউত্তর দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু হিসাব করে থাকেন।”

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, সালামের উত্তর দেওয়া মুসলিমদের জন্য বাধ্যতামূলক এবং এর উত্তম প্রতিউত্তর দেওয়া উচিত।

সালামের সঠিক উত্তর কীভাবে দেওয়া উচিত?

সালামের উত্তরে আমরা সাধারণত বলি, ‘ওয়া আলাইকুম আস-সালাম’ (وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمُ), যার অর্থ “আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক।” তবে ইসলামে এর চেয়ে উত্তম উত্তর দেওয়ারও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আমরা বলতে পারি:

  1. ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ (وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ) – এর অর্থ হলো, “আপনার উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।”
  2. ওয়া আলাইকুম আস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু (وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ) – এর অর্থ, “আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত এবং বরকত বর্ষিত হোক।”

এই উত্তম রূপের মাধ্যমে আমরা শুধু ইসলামের আদেশ পালনই করি না, বরং একজন মুসলিমের প্রতি আমাদের আন্তরিকতা ও দোয়া প্রকাশ করি।

সালামের গুরুত্ব এবং ইসলামী ভ্রাতৃত্ব

সালাম শুধু একটি অভিবাদন নয়, এটি মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা বাড়াতে সহায়ক। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন:

“তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা ঈমানদার না হও, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত একে অপরকে ভালো না বাসো। আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলব না, যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে? তোমরা পরস্পরকে সালাম দাও।”
(সহীহ মুসলিম, হাদিস ৫৪)*

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, সালাম আদান-প্রদান মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি করে এবং জান্নাতে প্রবেশের পথ সুগম করে।

সালাম কাকে দিতে হবে?

ইসলাম অনুযায়ী, সালাম কেবলমাত্র মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তবে ইসলামে সালামের কিছু বিধান রয়েছে, যেমন:

  1. মুসলিম ভাইকে সালাম: মুসলিমরা যখন অন্য মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা করবে, তখন তাদের সালাম দেওয়া সুন্নাহ। এটি উভয়ের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখে।
  2. বয়স্ককে আগে সালাম: তরুণদের উচিত বয়োজ্যেষ্ঠদের আগে সালাম দেওয়া।
  3. একজন পথচারীকে আগে সালাম: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “একজন পথচারীকে দাঁড়ানো ব্যক্তির আগে সালাম দিতে হবে।”
  4. ছোটদের সালাম: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছোটদেরও সালাম দিতেন, এবং এটি তরুণদের মধ্যে ভদ্রতা ও সম্মানের বোধ গড়ে তুলতে সহায়ক।

সালামের অন্যান্য গুরুত্ব

সালামের গুরুত্ব কেবলমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়; এটি সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসলামে সালামের ব্যবহার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে:

১. আত্মিক শান্তি ও নিরাপত্তা

সালাম আদান-প্রদান মুসলিমদের মধ্যে আত্মিক শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা পৌঁছায়। যখন আমরা কাউকে সালাম দিই, তখন আমরা তাকে বলতে চাই যে, তার প্রতি আমাদের কোনো শত্রুতা নেই এবং আমরা তার কল্যাণ কামনা করি।

২. সামাজিক সম্পর্কের উন্নতি

সালাম একজন মুসলিমকে অন্য মুসলিমের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এটা মুসলিমদের মধ্যে পরস্পর সম্মান, সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়ায়। একটি সহজ ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলার মাধ্যমে আমরা অন্যের হৃদয়ে আমাদের জন্য সম্মান ও স্নেহের বীজ বপণ করতে পারি।

৩. দ্বীনের প্রচার ও দাওয়াহ

সালামের ব্যবহার শুধুমাত্র মুসলিমদের মধ্যেই নয়, এটি দ্বীনের প্রচার এবং দাওয়াহর ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। সালাম দিয়ে মুসলিমরা অন্যদের ইসলামের শান্তি ও কল্যাণের বার্তা পৌঁছাতে পারে।

সালামের ভুল ব্যবহার থেকে সাবধানতা

বর্তমানে অনেক সময় দেখা যায় যে, সালামকে শুধুমাত্র সামাজিক শিষ্টাচার হিসেবে দেখা হয় এবং এর প্রকৃত অর্থ ও গুরুত্ব অনেক সময় ভুলে যাওয়া হয়। সালাম দেওয়ার সময় উদাসীনতা বা তাড়াহুড়ো করে দেওয়া ঠিক নয়। ইসলামের সুন্নাহ অনুযায়ী, সালাম সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে হবে এবং এর প্রকৃত অর্থ হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।

উপসংহার

সালাম ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ, যা মুসলিমদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করে। এটি ইসলামের শান্তির বার্তা বহন করে এবং সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে। ইসলামে সালামের উত্তম রূপ দেওয়ার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের আত্মিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

সালামের সঠিক ব্যবহার এবং গুরুত্বকে উপলব্ধি করে আমাদের উচিত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সালামকে অন্তর্ভুক্ত করা। তাই, যখনই কারো সাথে দেখা হবে, আমরা যেন সালাম দিতে ভুল না করি এবং সালামের উত্তম রূপে প্রতিউত্তর প্রদান করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সালামের সঠিক ব্যবহার এবং এর গুরুত্ব বোঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ধন্যবাদ টেক নিউজের সাথে থাকার জন্য।

Leave a Comment