হিমছড়ির অবস্থান — বাংলাদেশের এক অনন্য প্রাকৃতিক গহ্বর
হিমছড়ি (Himchari) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, কক্সবাজার শহরের ঠিক দক্ষিণে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কেন্দ্র। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সমন্বয়সাধন এক নতুন প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করে। TEK NEWS-এর পাঠকদের জন্য এই ব্লগে তুলে ধরা হলো হিমছড়ির বিস্তারিত ভৌগোলিক অবস্থান, পরিবেশ, পৌঁছানোর পথ, আকর্ষণ এবং প্রাসঙ্গিক FAQ।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রশাসনিক বিবরণ
বিভাগ ও উপজেলা
হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান মূলত কক্সবাজার জেলার রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় অবস্থিত। এটি কক্সবাজার-টেকনাফ ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া-র পাশেই বাঁধা পড়ে এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর দ্বারা ঘেরা।
বিস্তার ও ঘোষণা
১৯৮০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের “ফরেস্ট এক্ট” অনুযায়ী এটি জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়। এর মোট আয়তন প্রায় ১,৭২৯ হেক্টর (১৭.২৯ বর্গকিমি)।
ভৌগোলিক নির্দেশাঙ্ক (Coordinates)
- হিমছড়ি জলপ্রপাত: প্রায় ২১.৩৫৪৭৪°উত্তর,৯২.০২৫৭১°পূর্ব২১.৩৫৪৭৪° উত্তর, ৯২.০২৫৭১° পূর্ব২১.৩৫৪৭৪°উত্তর,৯২.০২৫৭১°পূর্ব
- সামগ্রিক উদ্যান এলাকা: প্রায় ২১.৩৫১৬৬°উত্তর,৯২.০২৫৫৫°পূর্ব২১.৩৫১৬৬° উত্তর, ৯২.০২৫৫৫° পূর্ব২১.৩৫১৬৬°উত্তর,৯২.০২৫৫৫°পূর্ব
অবস্থান সম্পর্ক ও যাতায়াত তথ্য
কক্সবাজার থেকে দূরত্ব
- কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিমি রাস্তা ধরে হিমছড়ি জলপ্রপাত অবস্থিত।
- তবে কিছু উৎস অনুযায়ী পুরো কাছাকাছি রাস্তা ১৯ কিমি দীর্ঘ হতে পারে।
ভ্রমণের সুবিধা সহজ
- রাস্তা পথে: ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি বা ট্যাক্সিতে পৌঁছানো যায়। মেরিন ড্রাইভের পাশ দিয়ে যাওয়ায় ভ্রমণক্রিয়া টানসই আর দৃশ্যপট চমৎকার।
- লাইনচিত্র: পাহাড়ের এক পাশে বন ও অন্য পাশে সমুদ্রের দৃশ্য দেখে ভ্রমণকারীদের আনন্দ দ্বিগুণ হয়।
প্রাকৃতিক ও বাস্তুতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
ঝর্ণা, পাহাড় ও বন
হিমছড়ির মূল আকর্ষণ হল পাহাড়ি ঝর্ণা, যা বর্ষাকালে (জুন–অক্টোবর) প্রবল ঝরনায় পূর্ণ হয়।
উচ্চ স্থান থেকে বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত দৃশ্য দেখা যায়—এটি প্রকৃতির এক মনোমুগ্ধকর উপহার।
জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ
- বনভূমি: প্রায় ৫৫০ হেক্টর অক্ষত মিশ্র সবুজ বনভূমি এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছ (৯টি, ৩৭ পরিবারের) — বিশেষ করে ক্রিটিক্যাল সংরক্ষণ প্রয়োজনীয় “বয়লাম” বৃক্ষ।
- প্রাণিকূল: আফ্রিকান হাতির ছোট গোষ্ঠী, অলিভ রিডলি কচ্ছপ, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ২৬ স্তন্যপায়ী ও ৫৬ রেপটাইল, অতীতে বন্যপ্রাণী যেমন বাঘ, হুলক, হাতি ইত্যাদি ছিলো—আজ বিপন্ন বা অদৃশ্য হয়েছে।
জলবায়ু ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার
কক্সবাজার-টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ হিমছড়ির পাশে বয়ে গেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ রুটে, যা ৮০ কিমি দীর্ঘ।
সাত্রিকভাবে, হিমছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ জল-উৎপাদন ও পানি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে।
হিমছড়ি কোথায়: সংক্ষিপ্ত সারমর্ম
দিক | বিবরণ |
---|---|
স্থান | রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলা, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ |
নিকটতম শহর | কক্সবাজার (প্রায় ১২–১৯ কিমি) |
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা | ১৯৮০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, জাতীয় উদ্যান (১৭২৯ হেক্টর) |
ভৌগোলিক নির্দেশাঙ্ক | ~21.35°N, 92.02°E |
গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য | পাহাড়, ঝর্ণা, বন, জীববৈচিত্র্য, মেরিন ড্রাইভ |
Frequently Asked Questions (FAQs)
১. হিমছড়ি কোথায় অবস্থিত?
কক্সবাজার শহরের দক্ষিণে, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার মধ্যে, বঙ্গোপসাগরের কাছে। প্রায় ১২–১৯ কিমি দূরে।
২. এটিকে কখন জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়?
১৯৮০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
৩. ব্লগিক আয়তন কত?
১৭২৯ হেক্টর বা প্রায় ১৭.২৯ বর্গকিমি।
৪. জলপ্রপাত পর্যন্ত দূরত্ব কত?
কক্সবাজার থেকে জলপ্রপাত পর্যন্ত প্রায় ১২ কিমি পর্যন্ত (কিছু ক্ষেত্রে ১৯ কিমি)।
৫. গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি ও বসবাসকারী জীববৈচিত্র্য?
286টা পাখি, 26 স্তন্যপায়ী, 56 রেপটাইল, অলিভ রিডলি টার্টল, বয়লাম বৃক্ষ, এবং হাতির কিছু গোষ্ঠী।
৬. কীভাবে পৌঁছাতে হয়?
ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি বা বাসে; মেরিন ড্রাইভের দুরন্ত দৃশ্যপটে ভ্রমণ উপভোগ্য।
৭. জলপ্রপাত কখন বেশি সুন্দর?
বর্ষাকালে (জুন–অক্টোবর) ঝর্ণার প্রবাহ বেশি ও দৃশ্য সুন্দর হয়; তবে সবসময়ই সবুজ গাছ ও তটরেখা চোখে পড়ে।
হিমছড়ি কোথায় তা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
১. হিমছড়ি কিসের জন্য বিখ্যাত?
হিমছড়ি মূলত বিখ্যাত এর ঝর্ণা, পাহাড়ের সবুজ বনভূমি, সমুদ্রের অসাধারণ দৃশ্য এবং সমুদ্রতীরবর্তী পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর জন্য। বিশেষ করে, পাহাড়ের উপরের ভিউপয়েন্ট থেকে বঙ্গোপসাগরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
২. হিমছড়ি কোন জেলায় অবস্থিত?
হিমছড়ি বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলাতে অবস্থিত। এটি কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।
৩. হিমছড়ি পাহাড়ের উচ্চতা কত?
হিমছড়ি পাহাড় খুব বেশি উঁচু নয়, এর উচ্চতা গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ ফুট এর মধ্যে। তবে ভিউপয়েন্টে উঠতে সিঁড়ি বা পাহাড়ি পথ ব্যবহার করতে হয়, যা পর্যটকদের জন্য একটি ছোট অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা।
৪. হিমছড়ি কোন থানায় অবস্থিত?
হিমছড়ি কক্সবাজার সদর থানার অন্তর্গত।
৫. কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি ভাড়া কত?
- CNG অটোরিকশা: একপথ ২০০-৩০০ টাকা, যাওয়া-আসা ৪০০-৬০০ টাকা
- মাইক্রোবাস/প্রাইভেট কার: একপথ ৮০০-১২০০ টাকা
- স্থানীয় বাস/টেম্পো: জনপ্রতি ৫০-৮০ টাকা (খুব সীমিত)
ভাড়া মৌসুম ও দরদাম অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে।
৬. হিমছড়ি ছবি
হিমছড়ি এমন একটি জায়গা যেখানে ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি করার জন্য অসাধারণ ব্যাকগ্রাউন্ড পাওয়া যায়—
- পাহাড়ের উপরে নীল সমুদ্রের দৃশ্য
- ঝর্ণার ধারা
- পাহাড়ি সবুজ বন
এজন্য অনেক ভ্রমণ ব্লগার ও ফটোগ্রাফার এখানে শুট করে থাকেন।
৭. কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি কত কিলোমিটার?
কক্সবাজার শহর থেকে হিমছড়ির দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। গাড়িতে সময় লাগে প্রায় ২০-৩০ মিনিট।
৮. হিমছড়ি বিচ
হিমছড়ি বিচ মূলত পাহাড়ের নিচে অবস্থিত একটি শান্ত সমুদ্র সৈকত। এখানে মানুষের ভিড় তুলনামূলক কম থাকে, তাই যারা নিরিবিলি পরিবেশে সমুদ্র দেখতে চান তাদের জন্য এটি আদর্শ।
উপসংহার
হিমছড়ি বাংলাদেশের এক অনন্য প্রকৃতির ভাণ্ডার—যেখানে পাহাড়, বন, জলপ্রপাত, প্রাণিকূল ও সমুদ্র সবই মিলে এক মনোহর ভ্রমণ গড়ে। কক্সবাজার থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত এই স্থানটি প্রকৃতি ও শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য দারুণ এক গন্তব্য। TEK NEWS-এর পাঠকদের জন্য এটি হতে পারে ভ্রমণ পরিকল্পনার চৌকস পথপ্রদর্শক।