হিমছড়ি: পাহাড়, ঝর্ণা ও শান্তি—কক্সবাজারের অপরূপ সৌন্দর্য

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

September 12, 2020

বাংলাদেশের পতিত সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের দক্ষিণে, প্রায় ১২ কিমি দূরে অবস্থিত হিমছড়ি। এটি শুধু একটি পর্যটন এলাকা নয়, বরং একটি বাস্তুতন্ত্রিক রত্ন—হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান ও দর্শনীয় ঝর্ণাসহ প্রাকৃতিক দৃশ্যের এক অপূর্ব সমাহার। ঐতিহাসিক বিভাজন থেকে পরিবেশ ও ভ্রমণ পরামর্শ—সবই এখানে তুলে ধরা হলো।

ইতিহাস ও সংরক্ষণ

জাতীয় উদ্যান হিসাবে প্রতিষ্ঠা

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮০ সালে এবং এটি প্রায় ১,৭২৯ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত। এটি মিশ্র সবুজ বনভূমি, পাহাড়ি এলাকা এবং উপকূলীয় অঞ্চল ধারণ করে।

পরিবেশ ও বন্যজগৎ

এখানে ১১৭ প্রজাতির গাছ, ২৬ স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৫৬ রেপটাইলস এবং ২৮৬ প্রজাতির পাখি রয়েছে। উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণগুলোর মধ্যে আছে লিয়র্ডলি কচ্ছপ (Olive Ridley Turtle), বায়োলাম গাছ (Boilam Tree), এবং বাস্তুচ্যুত এশীয় হাতি।

প্রাকৃতিক দৃশ্য ও আকর্ষণ

উত্তর-দক্ষিণের মেলবন্ধন

মেরিন ড্রাইভ শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিমি দীর্ঘ—বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ। হিমছড়ি এই পথে একটি প্রধান আকর্ষণ, যেখানে এক দিকে সমুদ্র তো অন্য দিকে পাহাড়ের সবুজ ঢেউ—অদ্ভুত এক দৃশ্য সংমিশ্রণ।

ঝর্ণা ও পাহাড়

হিমছড়ির ঝর্ণা ভিজিটরের জন্য এক চমৎকার অপূর্ব অভিজ্ঞতা। শীতকালে ঝর্ণাটি কম প্রবাহিত হলেও বর্ষাকালে (জুন–অক্টোবর) এটি পূর্ণ রূপে ঝরনা হিসেবে প্রাণোজ্জ্বল হয়। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁচ্ছলে বঙ্গোপসাগরের বিস্তৃত দৃশ্য চোখে পড়ে—সত্যিই স্বর্গসুমেধা অনুভূতি।

বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদপ্রাচুর্য

অরণ্য এবং উদ্যান পর্যটকদের জন্য শিখন ও গবেষণার সেরা স্থান। এখানকার প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র পরিবেশ শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ভ্রমণ ও পর্যটন তথ্য

যাতায়াত ও প্রবেশ

  • অবস্থান: কক্সবাজার থেকে প্রায় ১২ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত।
  • পাবলিক পরিবহন: স্থানীয় বাস বা সিএনজি করে যাওয়া যায়। ভাড়া সাধারণত ২০–৩০ টাকা, সময় প্রায় ২০–৩০ মিনিট।
  • ব্যাক্তিগত যান: গাড়ি নিয়ে সহজেই যাওয়া সম্ভব; পার্কিং ফি প্রায় ৫০ টাকা।

প্রবেশ ফি

স্থানীয়দের জন্য আনুমানিক ২০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য প্রায় ১০০ টাকার মতো দিতে হতে পারে।

ভ্রমণের সেরা সময়

ঝর্ণার পূর্ণ দৃশ্য দেখতে বর্ষাকাল (জুন–অক্টোবর) সেরা। তবে আবহাওয়া এবং নিরাপত্তার দিক থেকে শীতকাল (নভেম্বর–মার্চ) আরামদায়ক।

প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি

বিরক্তি এড়াতে:

  • হাইকিং-এর জন্য উপযোগী জুতা পরুন
  • পর্যাপ্ত পানি, সানস্ক্রিন, কীটনাশক এবং টুপি সাথে রাখুন
  • আবর্জনা না ফেলুন, প্রকৃতি রক্ষা করুন Evendo

FAQs (Frequent Questions)

১. হিমছড়ি কোথায় অবস্থিত?
কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১২ কিমি দক্ষিণে, মেরিন ড্রাইভের পাশে অবস্থিত।

২. জাতীয় উদ্যান হিসেবে এর গুরুত্ব কী?
এটি বিদ্যমান বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের বাসস্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষিত এলাকা, যা ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত।

৩. যাতায়াত ব্যবস্থা কী?
বাস, সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়ি দ্বারা যাওয়া যায়; সময় আনুমানিক ২০–৩০ মিনিট।

৪. ঢিঙ্গা ঝর্ণা সর্বোত্তম কী সময় দেখা যায়?
বর্ষার সময়—ঝর্ণা পূর্ণ প্রবাহে ও প্রাণবন্ত হয়।

৫. প্রবেশ ফি কত?
স্থানীয়দের জন্য প্রায় ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য আনুমানিক ১০০ টাকা।

৬. আবেদনযোগ্য প্রস্তুতি কী?
যথাযথ পোশাক, পানি, সানস্ক্রিন, কীটনাশক এবং হাইকিং জুতা নিয়ে যাওয়া শ্রেয়।

উপসংহার

হিমছড়ি শুধুমাত্র একটি পর্যটন কেন্দ্র নয়—এটি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, ও পরিবেশের এক অনবদ্য মেলবন্ধন। পাহাড়, সমুদ্র, ঝর্ণা, বন্যজগৎ এবং অনন্য দৃশ্যের সংমিশ্রণ এখানে এক মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতা তৈরি করে। TEK NEWS-এর পাঠকদের জন্য হিমছড়ি এমন এক স্থান, যেখানে ভ্রমণ মানেই শান্তি, শিক্ষা ও ভিজ্যুয়াল আনন্দ—সবই মিলে তৈরি হয় স্মরণীয় এক সফর।

Leave a Comment