ইলিয়াস হোসেন: সাহসী সাংবাদিকতা থেকে ডিজিটাল প্রতিরোধের আয়কান

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

March 12, 2020

ইলিয়াস হোসেন (জন্ম: ১ জানুয়ারি ১৯৮৪, চুয়াডাঙ্গা) বাংলাদেশের একজন সাহসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও জনমুখী ইউটিউব ব্যক্তিত্ব। তিনি যাঁর কাজের জন্য দেশজুড়ে সমালোচনামূলক বার্তা ছড়িয়েছেন, তা তাকে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পর্যায়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভয়েসে পরিণত করেছে।

প্রারম্ভিক জীবন ও পেশাগত পরিচয়

ইলিয়াস হোসেন জন্ম গ্রহণ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলার কাশপাড়া গ্রামে। ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন, কিন্তু সাংবাদিকতা হল তাঁর আসল অভিলাষ। তিনি শুরু করেন একুশে টেলিভিশনের (ETV) জনপ্রিয় অনুসন্ধানী প্রোগ্রাম “একুশের চোখ” থেকে, যেখানে তিনি সামাজিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও শক্তিশালীদের শোষণ বিষয় উন্মোচনে পরিচিত হন।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও বিপদ

ইলিয়াস এমন প্রতিকূল সত্য তুলে আনেন, যেগুলো অন্যান্য অনেক সাংবাদিক উপেক্ষা করেন। তাঁর রিপোর্টে উঠে এসেছে—যোগদানের ভোটভিত্তিক কেলেঙ্কারির খবরে, সাইবার অপরাধ, শাসনের গোপন চিহ্ন, নির্বিচার ঘটনা, অপহরণ ও শক্তির অপব্যবহার বিষয়ক প্রতিবেদন।

এবার তাঁর সাহসী কাযর্কে রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে আশঙ্কা ও মামলা-বর্ষা বেড়ে ওঠে। ETV চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ও সিনিয়র সাংবাদিক ড. কানক সরোয়ার গ্রেপ্তার হন; ইলিয়াস নিজেকে নিরাপদ রাখতে দেশে থেকে পালিয়ে যান।

elias hossain
Elias Hossain

নির্বাসন জীবন ও ডিজিটাল যুগ

২০১৫ সালে, বাড়তে থাকা হুমকি ও মামলা থেকে রক্ষা পেতে ইলিয়াস যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন। সে পরবর্তী থেকে ইউটিউব ও ফেসবুক – এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে থেকে বাংলাদেশের বর্তমান বিবরণ, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্বাচন-ব্যাপক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে যাচ্ছেন।

  • তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ৪.২৭ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে।
  • Verified Facebook page-এও তিনি ব্যাপকভাবে সক্রিয়।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করে তিনি “দুর্নীতি, পলিটিকাল শোষণ, রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও গণতন্ত্র রক্ষার” বার্তা পৌঁছে দেন—যা তাকে প্রবাসে থাকা অবস্থায়ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী করে তোলে।

আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণতান্ত্রিক প্রেক্ষাপট

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (DSA)-এর প্রয়োগে সাংবাদিকদের ওপর দমন চাপ বেড়ে যায়। ইলিয়াসসহ অন্যান্য বিশ্লেষকরা—যেমন ড. মুশফিকুল ফজল আনসারে, পিনাকী ভট্টাচার্য, কানক সরোয়ার—এই আইনকে কেন্দ্র করে মুক্তি ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে এবং মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, যেখানে ইলিয়াস ও তাঁর সহকর্মীদের প্রচেষ্টা অবদান রাখে বলে গণ্য করা হয়

আইনি ঝামেলা ও দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি

  • ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে DSA মামলা দায়ের হয়—তাতে ইলিয়াসকে মিথ্যা তথ্য প্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযুক্ত হিসেবে আদালতে তোলা হয় সময় নিউজ | সময়ের প্রয়োজনে সময়
  • সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ জারি হয়।

এসমস্যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর নজরে আসে; ARTICLE 19 এর মতো সংস্থা সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও বিচারের দ্রুততা দাবি করে।

ইলিয়াস হোসেন – সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

প্রশ্ন: ইলিয়াস হোসেন কে?
উত্তর: ইলিয়াস হোসেন একজন বাংলাদেশি অনুসন্ধানী সাংবাদিক, ইউটিউবার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি “একুশে টিভি”-তে একুশের চোখ প্রোগ্রামের জন্য পরিচিত হন এবং পরে ইউটিউবে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষণমূলক কনটেন্ট প্রকাশ করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

প্রশ্ন: ইলিয়াস হোসেন কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার কাশপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন: তার জন্মসাল কত?
উত্তর: ১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি।

প্রশ্ন: ইলিয়াস হোসেন কোথায় পড়াশোনা করেছেন?
উত্তর: তিনি ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন।

প্রশ্ন: তিনি কোন টেলিভিশনে কাজ করেছেন?
উত্তর: একুশে টেলিভিশন (ETV)।

প্রশ্ন: তিনি কেন দেশ ছেড়েছেন?
উত্তর: একাধিক রাজনৈতিক মামলা ও নিরাপত্তা হুমকির কারণে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

প্রশ্ন: বর্তমানে কোথায় থাকেন?
উত্তর: যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে অনলাইনে সাংবাদিকতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রশ্ন: তার ইউটিউব চ্যানেলের নাম কী?
উত্তর: Elias Hossain (ইউটিউব ভেরিফায়েড চ্যানেল)।

প্রশ্ন: তার ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার কত?
উত্তর: প্রায় ৪.২ মিলিয়ন (২০২৫ সালের হিসাবে)।

প্রশ্ন: তার সাংবাদিকতা কোন বিষয়ে বেশি ফোকাস করে?
উত্তর: রাজনৈতিক দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সামাজিক অনিয়ম এবং গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন।

প্রশ্ন: তার বিরুদ্ধে কী ধরনের মামলা হয়েছে?
উত্তর: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (DSA) এর অধীনে মিথ্যা তথ্য প্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে মামলা।

প্রশ্ন: তিনি কোন বড় রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
উত্তর: ২০২৪ সালের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে তথ্য প্রচার ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে বড় ভূমিকা রাখেন, যা শেখ হাসিনা সরকারের পতনে প্রভাব ফেলে।

উক্তি – ইলিয়াস হোসেন

  • “Show me what happened to my country after separating from Pakistan. This is the Parliament building that many people say Pakistan did nothing to us, this (Parliament building) is theirs.”
    – ১৬ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ইউটিউবে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে।
  • “As a journalist, I consider it a sacred duty to present all the brave warriors of ’75 one by one to the nation. After the nation’s sun child Major Dalim, I am going to present another patriotic and fearless brave warrior to the nation, InshaAllah.”
    – ইউটিউবে দেওয়া বক্তব্য থেকে।
  • “With the aim of creating good relations between the people of Bangladesh and Pakistan, Pakistani journalist Sadia and I have created the ‘Pak Bangla connect’ YouTube channel. Everyone is requested to subscribe to the channel.”
    – ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ফেসবুক পোস্টে।
  • “I support the position of Jamaat-e-Islami as it was in 1971. I have done so before, I still do, and I will do so throughout my life.”
    – ২৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ইউটিউবে দেওয়া বক্তব্যে।
  • “I am not responsible for any party’s benefits. I only belong to one party, that is the Anti-Indian Party.”
    – ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ফেসবুক পোস্টে।
  • “I would like to give a piece of advice to politicians including Dr Yunus: to get the love of the people of this country, you have to be an enemy of India.”
    – ৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ফেসবুক পোস্টে।
  • “Fine arts should be banned; it is of no use to Bangladesh except for smoking marijuana and holding inauspicious processions.”
    – ১২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখের ফেসবুক পোস্ট থেকে।

সারসংক্ষেপ

থিমউক্তি থেকে ধারণা
স্বাধীনতার চিত্রনাট্যপ্রথম উক্তিতে নিজ দেশের পরিবর্তন ও পার্লামেন্ট ভবনকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে—রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে সচেতনতা নির্দেশক।
সাংবাদিকের দায়িত্বমুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় তুলে দিয়ে জাতীয় গভীরতার প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ।
পাক-বাংলা সম্পর্কসহযোগিতামূলক ও যোগাযোগ-ভিত্তিক কৌশল প্রয়োগ—সৌহার্দ্য চ্যানেল প্রচার।
রাজনৈতিক অভিমুখ৭১-র জামায়াতের অবস্থানের প্রতি সমর্থন বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ।
বিরোধিতা ও রাজনৈতিক নির্দেশনা“অ্যান্টি-ইনডিয়ান পার্টি” ধরণায় একচেটিয়া রাজনৈতিক অভিমুখের আহ্বান।
সংস্কৃতি ও চর্চা দর্শনচারুকলা বিরোধ, সামাজিক আচার-আচরণে একান্ত নেতিবাচক মনোভাব।

প্রভাব এবং উত্তরাধিকার

ইলিয়াস হোসেন সাহসী সাংবাদিক, সামাজিক বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক সংস্কারশীল হিসেবে গণ্য। তাঁর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো—যথা ইউটিউব ও ফেসবুক—বাংলা ভাষায় তথ্য ও বিশ্লেষণ প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দেয়।

তার কাজ:

  • সরকারে জবাবদিহিতা সৃষ্টি করেছে।
  • অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও তরুণদের মধ্যে সোচ্চার প্রতিরোধের আবহ তৈরি করেছে।
  • রাজনীতিতে একটি ডিজিটাল মিডিয়া যে গণমুখী বার্তা পায়, তার ধারণা বাস্তবায়ণ করেছে।

প্রিয় টেক নিউজ পাঠকবৃন্দ, ইলিয়াস হোসেনের গল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—কিভাবে ডেটা, প্রশাসন, প্রযুক্তি ও নৈতিকতার সংমিশ্রণে একজন সাংবাদিক ডিজিটাল যুগে গণতন্ত্রের শির Sum প্রজ্জ্বলন করতে পারে।

Leave a Comment