কক্সবাজার—বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকতের শহর—এখন রেলস্টেশন পেয়েছে, যা তার পর্যটন আকর্ষণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে চলেছে। এই “আইকনিক” রেলস্টেশন কক্সবাজারকে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে যুক্ত করেছে এবং পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও সার্বিক ধারণা
- অবস্থান: চাঁদারপাড়া, ঝিলংঝা ইউনিয়ন, কক্সবাজার সদর উপজেলার অন্তর্গত। সাগর তীরবর্তী অবস্থায়, সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
- আর্কিটেকচার: “oyster-shaped” ডিজাইন, যা সমুদ্রের সঙ্গে এর সম্পর্ক প্রতিফলিত করে।
নির্মাণ ইতিহাস ও প্রকল্প বিবরণ
- নির্মাণশুরু: আগস্ট ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম থেকে ডোহাজারি–কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অংশ হিসেবে কাজ শুরু।
- মোট ব্যয়: প্রায় ২১.৪ কোটি টাকা (Tk 214 crore)।
- ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: ১৪ জানুয়ারি ২০২১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
- সাধারণ উদ্বোধন: ১১ নভেম্বর ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী স্টেশন উদ্বোধন করেন এবং ১ ডিসেম্বর থেকে ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেন চলতে শুরু করে।
স্টেশনের বিন্যাস এবং সুযোগ-সুবিধা
- মোট ফ্লোর: পাঁচতলা (পঞ্চ তলা), যার শীর্ষতলা ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে।
- গ্রাউন্ড ফ্লোর: টিকেট কাউন্টার, সরকারী সেবা, দোকান, লকার, তথ্য কেন্দ্র, মসজিদ ও ক্রিয়াকলাপ কেন্দ্র রয়েছে।
- প্রথম (১ম) তলা: ডিপার্চার লাউঞ্জ, ওয়েটিং রুম, সন্তান যত্নের স্থান, এস্কেলেটর, লিফট, প্রার্থনালয়, তথ্য কেন্দ্র ইত্যাদি।
- দ্বিতীয় (২য়) তলা: রেস্টুরেন্ট ও দোকান।
- তৃতীয় (৩য়) তলা: ৩৯ টি রুম বিশিষ্ট একটি হোটেল।
- চতুর্থ (৪র্থ) তলা: অফিস ও সম্মেলন কাফেলার জন্য বরাদ্দ।
রেল যোগাযোগ ও গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন
- রেল লাইন: চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন (১০২ কিমি), ডুয়াল গেজ, যাত্রী ও মালবাহী উভয় পরিষেবা।
- ট্রেন পরিষেবা:
- কক্সবাজার এক্সপ্রেস: ১ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী পরিবহন করে চলছে।
- পর্যটক এক্সপ্রেস (Parjatak Express): ১০ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে চালু; ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও বিমানবন্দর স্টপেজ আছে।
প্রভাব ও গুরুত্ব
- পর্যটন উন্নয়ন: রেল লাইন চালু হওয়ার ফলে কক্সবাজার আরও সহজে ভ্রমণযোগ্য হয়েছে; সারাবছর দেশের প্রতিটি কোণ থেকে আগত পর্যটকেরা দ্রুত পৌছাতে পারে ।
- আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি: এটি ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের অংশ হতে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে মায়ানমারসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রেলগত সংযোগ নিশ্চিত করবে l।
- সুবিধা বৃদ্ধি: স্টেশনের আধুনিক নকশা, জায়গাপূর্ণ সুযোগের সঙ্গে এটি দেশের “প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন” হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
আকর্ষণীয় তথ্যের সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
অবস্থান | চাঁদারপাড়া, কক্সবাজার, সমুদ্র সৈকতের ~৩ কিমি দূরে |
সংযোগ | চট্টগ্রাম – ডোহাজারি – কক্সবাজার রেললাইন, ১০২ কিমি |
নির্মাণকাল | ২০১৭ শুরু, ২০২৩ উদ্বোধন, ব্যয় Tk 214 crore |
ফ্লোর | পাঁচতলা: পরিষেবা, লাউঞ্জ, হোটেল, অফিস |
ট্রেন | Cox’s Bazar Express (ডিসে’২৩), Parjatak Express (জনুয়ারি ’২৪) |
প্রভাব | পর্যটন, রেল সংযোগ, আন্তর্জাতিক সম্ভাবনা |
FAQs — প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
প্রশ্ন ১: কক্সবাজার রেলস্টেশন কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: চাঁদারপাড়া, ঝিলংঝা ইউনিয়নে, কক্সবাজার শহরের কাছ—সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র প্রায় ৩ কিমি দূরে।
প্রশ্ন ২: এই রেললাইনটি কবে খুলে?
উত্তর: ১১ নভেম্বর ২০২৩ উদ্বোধন করা হয়; ট্রেন পরিষেবা শুরু হয় ১ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে।
প্রশ্ন ৩: স্টেশনের আর্কিটেক্ট কে, এবং কি অনুপ্রেরণা ছিল?
উত্তর: স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ; “oyster”- আকার প্রতীকীভাবে সৈকতের স্মৃতিচিহ্ন।
প্রশ্ন ৪: কোন ট্রেনগুলো চলছে?
উত্তর: Cox’s Bazar Express (১ ডিসেম্বর ২০২৩) এবং Parjatak Express (১০ জানুয়ারি ২০২৪)।
প্রশ্ন ৫: স্টেশন কত তলা বিশিষ্ট এবং কোথায় কী আছে?
উত্তর: পাঁচতলা—গ্রাউন্ডে টিকেট ও সেবা, ১ম: কাজে/লাউঞ্জ, ২য়: রেস্টুরেন্ট, ৩য়: হোটেল, ৪র্থ: অফিস/সেমিনার।
উপসংহার
কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের রেল ও পর্যটন ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় উদ্বোধন করেছে। এটি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত, পর্যটকদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং ভবিষ্যত যোগাযোগের জন্য একটি মাইলফলক। TEK NEWS-এর পাঠকদের জন্য এই আধুনিক রেলস্টেশন সম্পর্কে বিস্তারিত আশা করি উপকারে আসবে।