আসসালামু আলাইকুম: অর্থ, বানান, উত্তর, সঠিক উচ্চারণ

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

April 29, 2020

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
আসসালামু আলাইকুম: অর্থ, বানান, উত্তর ও সঠিক উচ্চারণ

আল্লাহর নামে শুরু করছি। ইসলাম ধর্মে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার এক অন্যতম প্রকাশ হলো সালাম। সালামের মাধ্যমে একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের প্রতি শান্তি, কল্যাণ এবং আল্লাহর রহমত কামনা করে। সালাম দেওয়া এবং নেওয়া ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত, যা মুসলিম সমাজের মধ্যে বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব এবং সংহতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা “আসসালামু আলাইকুম” এই গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী অভিবাদনটির অর্থ, বানান, উত্তর এবং সঠিক উচ্চারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আসসালামু আলাইকুমের অর্থ

“আসসালামু আলাইকুম” (السلام عليكم) একটি আরবি বাক্যাংশ। এর আক্ষরিক অর্থ হলো “তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক”। সালামের মাধ্যমে মুসলমানরা একে অপরের জন্য আল্লাহর থেকে শান্তি এবং মঙ্গল কামনা করে থাকে। এটি শুধু অভিবাদন নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে একজন মুসলমান অপর মুসলমানের প্রতি সম্মান ও দোয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

বাক্যাংশ বিশ্লেষণ:

  • আস-সালাম (السلام): শান্তি, আল্লাহর একটি সুন্দর নাম।
  • আলাইকুম (عليكم): তোমাদের উপর।

এভাবে পুরো বাক্যের অর্থ দাঁড়ায়: “তোমাদের উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক।”

সঠিক বানান এবং উচ্চারণ

“আসসালামু আলাইকুম” বলতে গিয়ে অনেকে ভুল উচ্চারণ করতে পারেন বা বানানে বিভ্রান্ত হতে পারেন। মূল আরবি ভাষা থেকে এর শুদ্ধ বানান এবং উচ্চারণ জানতে হলে এটি সঠিকভাবে বোঝা জরুরি। আসুন, সঠিক উচ্চারণের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি:

  • আস-সালামু (আস-সা-লা-মু): এখানে “স” শব্দটি তীক্ষ্ণভাবে উচ্চারণ করতে হবে।
  • আলাইকুম (আ-লাই-কুম): “আ” এবং “ই” এর মৃদু উচ্চারণ এবং “কুম” শব্দের শেষে ‘ম’ স্পষ্ট করতে হবে।

সালামের উত্তরের সঠিক পদ্ধতি

ইসলামে শুধু সালাম দেওয়া নয়, সালামের উত্তর দেওয়া অনিবার্য। কুরআন এবং হাদিসে সালামের উত্তর দেওয়ার গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সালামের উত্তরে বলতে হয়, “ওয়া আলাইকুমুস সালাম” (وعليكم السلام), যার অর্থ “আপনাদের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক।”

সালামের উত্তরে “ওয়া” শব্দটি যোগ হয়, যার অর্থ “এবং তোমাদের উপরও।” এভাবে পুরো বাক্যের অর্থ দাঁড়ায়, “তোমাদের উপরও আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক।”

হাদিসে সালামের গুরুত্ব

সালামের গুরুত্ব ইসলামের মূল শিক্ষার একটি অংশ। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম দেওয়া এবং নেওয়ার বিষয়ে অসংখ্য হাদিসে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য হাদিস তুলে ধরা হলো:

১. প্রথমে সালাম দেওয়া ইসলামের অন্যতম সুন্দর কাজ:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর একে অপরকে ভালোবাসা না করা পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলব না যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসবে? তোমাদের মধ্যে সালাম প্রচার করো।” (মুসলিম)

২. সালামের উত্তরের গুরুত্ব:
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন, “যখন তোমাদের সালাম দেওয়া হয়, তখন তার চেয়ে উত্তমভাবে সালাম ফেরত দাও বা একই রকম উত্তর দাও।” (সুরা নিসা, আয়াত ৮৬)

সালামের কিছু উপকারিতা

ইসলামে সালাম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি শুধু ইসলামের শিক্ষা নয়, বরং মুসলিম সমাজের বিভিন্ন উপকার বয়ে আনে। নিচে সালামের কিছু উপকারিতা তুলে ধরা হলো:

১. ভ্রাতৃত্ববোধ ও ভালোবাসা বৃদ্ধি:
সালামের মাধ্যমে মুসলমানরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন। এটি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে মজবুত করে।

২. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন:
সালাম দেওয়া এবং নেওয়ার মাধ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। এটি আল্লাহর কাছে একটি পছন্দনীয় আমল।

৩. শান্তি ও কল্যাণ ছড়ানো:
সালামের মূল উদ্দেশ্য হলো শান্তি ও কল্যাণের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। এটি সমাজে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করে।

সালামের ইসলামি শিষ্টাচার

সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু ইসলামী শিষ্টাচার রয়েছে, যা জানা ও মানা প্রতিটি মুসলমানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু শিষ্টাচার উল্লেখ করা হলো:

১. সবার আগে সালাম দেওয়া:
যখন দুই মুসলমান একে অপরের মুখোমুখি হন, তখন আগে সালাম দেওয়া সুন্নত। এটি সম্মান প্রদর্শনের একটি অন্যতম সুন্দর পদ্ধতি।

২. জোরে এবং স্পষ্টভাবে সালাম দেওয়া:
সালাম দেওয়ার সময় এটি যেন স্পষ্টভাবে এবং সুমিষ্ট কণ্ঠে হয়। সবার কাছে সালামের বার্তা পৌঁছানো উচিত।

৩. বড়দের আগে সালাম দেওয়া:
ছোটদের উচিত বড়দের আগে সালাম দেওয়া। এটি ইসলামের শিষ্টাচারের একটি অংশ।

সালামের প্রসঙ্গ নিয়ে কুরআন এবং হাদিসের দৃষ্টিকোণ

কুরআন এবং হাদিসে সালামের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। নিচে কিছু কুরআনের আয়াত এবং হাদিস তুলে ধরা হলো:

  • আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা বলেন, “তোমরা গৃহে প্রবেশ করার সময় একে অপরকে সালাম জানাও, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পবিত্র এবং মঙ্গলজনক অভিবাদন।” (সুরা নূর, আয়াত ৬১)
  • রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর একে অপরকে ভালোবাসা না করা পর্যন্ত প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না।” (মুসলিম)

উপসংহার

“আসসালামু আলাইকুম” শুধু একটি সাধারণ অভিবাদন নয়, এটি ইসলামের মহান শিক্ষা এবং বন্ধুত্বের প্রতীক। এটি মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, শান্তি, এবং মমত্ববোধ জাগ্রত করে। সঠিক উচ্চারণ, অর্থ এবং উত্তরের মাধ্যমে সালামের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। তাই আসুন আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সালামকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে পালন করি এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

ধন্যবাদ টেক নিউজের সাথে থাকার জন্য।

Leave a Comment