মিরপুর চিড়িয়াখানা – বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা

tek news icon bd

TEK NEWS DESK

August 15, 2025

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা, যা মিরপুর চিড়িয়াখানা নামেও পরিচিত, দেশের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন ও শিক্ষা কেন্দ্র। প্রায় ৭৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই চিড়িয়াখানা শুধু বিনোদনের স্থান নয়, বরং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, গবেষণা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

অবস্থান ও যাতায়াত

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকার মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় অবস্থিত। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস, রিকশা, সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যায়।

ঠিকানা: মিরপুর-১, ঢাকা-১২১৬, বাংলাদেশ
প্রতিবেশী গুরুত্বপূর্ণ স্থান: বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক (গাজীপুরে), শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, জাতীয় উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) – যা চিড়িয়াখানার ঠিক পাশেই অবস্থিত।

ইতিহাস

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, যখন এটি সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে প্রাণী সংগ্রহ ও প্রস্তুতি কার্যক্রম শুরু হয় তার আগেই। সরকারের উদ্যোগে এখানে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির প্রাণী আনা হয়।

প্রথম দিকে সীমিত সংখ্যক প্রাণী থাকলেও, সময়ের সাথে সাথে প্রাণীর সংখ্যা ও প্রজাতি উভয়ই বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম চিড়িয়াখানা হিসেবে পরিচিত।

Bangladesh National Zoo Mirpur Dhaka
Bangladesh National Zoo Mirpur Dhaka

প্রাণী ও পাখির সংগ্রহ

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় বর্তমানে প্রায় ২,১৫০টি প্রাণী ও পাখি রয়েছে, যা প্রায় ১৯০টিরও বেশি প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এখানে দেশি ও বিদেশি উভয় প্রজাতির বন্যপ্রাণী রাখা হয়।

জনপ্রিয় প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে

  • বাঘ ও সিংহ – রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আফ্রিকান সিংহ
  • হাতি – বাংলাদেশি ও এশিয়ান হাতি
  • হরিণ – চিত্রা হরিণ, সাম্বার হরিণ
  • ভাল্লুক – হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার
  • বানর ও শিম্পাঞ্জি – রেসাস বানর, গিবন, শিম্পাঞ্জি
  • জিরাফ ও জেব্রা – আফ্রিকা থেকে আনা
  • গণ্ডার – ভারতীয় গণ্ডার
  • হিপ্পোপটেমাস – জলহস্তী
  • পাখি – ময়ূর, টিয়া, রাজহাঁস, উটপাখি, ঈগল, শকুন
  • সরীসৃপ – কুমির, অজগর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ
  • জলচর প্রাণী – নানা প্রজাতির মাছ ও কচ্ছপ

প্রাণী সংরক্ষণ ও শিক্ষা কার্যক্রম

মিরপুর চিড়িয়াখানা শুধু বিনোদনের জায়গা নয়, বরং এটি একটি প্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে। এখানে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বন্যপ্রাণী সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রদর্শনী, শিক্ষা সফর ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

দর্শনার্থীর অভিজ্ঞতা

মিরপুর চিড়িয়াখানা পরিবার, বন্ধু ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ ভ্রমণস্থান। এখানে বড় বড় খাঁচা ও উন্মুক্ত মাঠে প্রাণীগুলোকে ঘুরে দেখতে পারেন। শীতে এখানে ভিড় বেশি হয়, কারণ আবহাওয়া প্রাণী দেখার জন্য উপযুক্ত থাকে।

পাশেই রয়েছে জাতীয় উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন), যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটা ও পিকনিকের ব্যবস্থা আছে। অনেক দর্শনার্থী একসাথে দুটি স্থান ভ্রমণ করেন।

টিকিট মূল্য ও সময়সূচি

টিকিট মূল্য:

  • প্রাপ্তবয়স্ক: ৫০ টাকা
  • শিশু (৩-১২ বছর): ২৫ টাকা
  • ৩ বছরের নিচে: ফ্রি

সময়সূচি:

  • গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল-অক্টোবর): সকাল ৯টা – বিকেল ৬টা
  • শীতকাল (নভেম্বর-মার্চ): সকাল ৯টা – বিকেল ৫টা
  • প্রতি মঙ্গলবার চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকে।

ভ্রমণ টিপস

  1. সকাল সকাল যান – ভিড় এড়িয়ে প্রাণীগুলো স্বাভাবিক আচরণে দেখতে পারবেন।
  2. পানি ও হালকা খাবার রাখুন – ভিতরে খাবারের দোকান থাকলেও দাম বেশি ও ভিড় বেশি হয়।
  3. ক্যামেরা নিন – সুন্দর ছবি তোলার জন্য।
  4. পরিবেশ পরিষ্কার রাখুন – প্যাকেট বা বোতল যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
  5. প্রাণীকে খাবার দেবেন না – এটি প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

সমালোচনা ও চ্যালেঞ্জ

যদিও এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান, কিছু সমালোচনাও রয়েছে।

  • অনেক প্রাণীর খাঁচা ছোট ও পুরনো।
  • গ্রীষ্মকালে কিছু প্রাণীর যত্ন যথাযথভাবে নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ আছে।
  • দর্শনার্থীদের সচেতনতার অভাবে অনেক সময় প্রাণীদের অস্বস্তি হয়।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার ও কর্তৃপক্ষ প্রাণীর জীবনযাত্রা উন্নত করতে এবং দর্শনার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাজ করছে।

মিরপুর চিড়িয়াখানা – সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

১. মিরপুর চিড়িয়াখানার অফিসিয়াল নাম কী?
মিরপুর চিড়িয়াখানার অফিসিয়াল নাম হলো বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা

২. মিরপুর চিড়িয়াখানা কোথায় অবস্থিত?
এটি ঢাকার মিরপুর-১ এলাকায়, জাতীয় উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন)-এর পাশেই অবস্থিত।

৩. মিরপুর চিড়িয়াখানার টিকিট মূল্য কত?

  • প্রাপ্তবয়স্ক: ৫০ টাকা
  • শিশু (৩–১২ বছর): ২৫ টাকা
  • ৩ বছরের নিচে শিশু: ফ্রি

৪. চিড়িয়াখানা খোলা থাকে কোন সময়?

  • গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল–অক্টোবর): সকাল ৯টা – বিকেল ৬টা
  • শীতকাল (নভেম্বর–মার্চ): সকাল ৯টা – বিকেল ৫টা
  • প্রতি মঙ্গলবার বন্ধ থাকে।

৫. এখানে কী কী প্রাণী দেখা যায়?
বাঘ, সিংহ, হাতি, হরিণ, ভাল্লুক, জিরাফ, জেব্রা, গণ্ডার, কুমির, শিম্পাঞ্জি, উটপাখি, ময়ূরসহ প্রায় ১৯০টিরও বেশি প্রজাতির প্রাণী ও পাখি দেখা যায়।

৬. চিড়িয়াখানায় খাবার নেওয়া যায় কি?
হ্যাঁ, তবে ভিতরে কিছু খাবারের দোকানও আছে। খাবার শেষে ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।

৭. প্রাণীদের ছবি তোলা যায় কি?
হ্যাঁ, ছবি তোলা যায়। তবে প্রাণীকে বিরক্ত করা বা ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করাই ভালো।

৮. প্রাণীকে খাবার খাওয়ানো যাবে কি?
না। প্রাণীকে বাইরে থেকে খাবার খাওয়ানো তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৯. চিড়িয়াখানার পাশে আর কী দেখার জায়গা আছে?
জাতীয় উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) ঠিক পাশেই অবস্থিত। একই দিনে দুটি জায়গা ঘোরা যায়।

১০. ভ্রমণের সেরা সময় কোনটি?
শীতকাল (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি) মিরপুর চিড়িয়াখানা ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

১১. মিরপুর চিড়িয়াখানা কত নাম্বারে

মিরপুর চিড়িয়াখানা মিরপুর-১ নম্বরে অবস্থিত।

উপসংহার

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা শুধু বিনোদনের স্থান নয়—এটি প্রাণী সংরক্ষণ, শিক্ষা ও গবেষণারও একটি কেন্দ্র। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি আনন্দময় দিন কাটানোর জন্য এটি অন্যতম সেরা গন্তব্য। যদি ঢাকায় থাকেন বা ঢাকায় ভ্রমণে আসেন, তাহলে মিরপুর চিড়িয়াখানা অবশ্যই আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখা উচিত।

ধন্যবাদ টেক নিউজের সাথে থাকার জন্য।

Leave a Comment